খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

বাংলাদেশে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দমনপীড়নে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশে সহিংস পন্থায় শ্রমিক আন্দোলন দমনে নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে বাংলাদেশে শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়ন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয় সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে জানানো হয়।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আলাদা করে কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ নভেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতি ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন, যারা শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন করবে, হুমকি দেবে বা শ্রমিকদের ভীতি প্রদর্শন করবে তারা প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে। তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মী নেত্রী কল্পনা আক্তারের সংগ্রামের কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পাঁচজন গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কি কোনও ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তৃতা থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রসারে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিশ্বজুড়ে সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র তার এই তৎপরতা অব্যাহত রাখবে। আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি আবারও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পুরো বিবৃতির বিষয়েই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব।

বাংলাদেশে শ্রমিকদের বিক্ষোভে প্রাণহানি এবং সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এই মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে সহিসংতা, শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নের বৈধ কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার মতো বিষয়গুলোতে আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বিরুদ্ধে চলমান দমন-পীড়ন নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের মূলনীতি হলো- কোনও ধরনের সহিসংতা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই শ্রমিকরা যাতে স্বাধীনভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং মালিকপক্ষের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে পারে সেই অধিকার সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল জায়গায় এই মৌলিক মানবাধিকারগুলো নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন মিলার।

পরে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বিরোধী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা, গণগ্রেপ্তার এবং অপহরণসহ বিরোধীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শাসক দল আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু বাংলাদেশে এক দলের ওপর অন্য দলকে প্রাধান্য দেয় না, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এই একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা এক দলের ওপর অন্য দলকে প্রাধান্য দেই না। বাংলাদেশিরা নিজেরাই যা চায়, আমরাও তাই চাই। আর তা হচ্ছে: শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

তিনি বলেন, সরকার, বিরোধীদল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদেরকে আহ্বান জানাবো যেখানে তারা যেন বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে একসঙ্গে কাজ করে, যাতে করে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

পরে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে নিঃশর্ত সংলাপের জন্য চিঠি লিখেছেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা। ত্রিশের বেশি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেছে যে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। শুধু বিরোধী দল বিএনপিই বয়কটের ডাক দিয়েছে। ৩০ টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে কী যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিত্বশীল এবং অংশগ্রহণমূলক বলে বিবেচনা করবে, নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তি এবং বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বাড়াবে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি আপনার প্রশ্নের প্রশংসা করি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে আমাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তেমন কিছু করা থেকে আমি বিরত থাকব। আমি আগেই যেমন বলেছি, বাংলাদেশে আমাদের লক্ষ্য বরাবরের মতো একই রয়েছে। আর তা হচ্ছে, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!