খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ পৌষ, ১৪৩১ | ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  দুবাই পালানোর সময় মানবপাচারকারী রনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার
  ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো কনস্টেবল সুজনকে ট্রাইবুনালে নেয়া হয়েছে

বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন নিয়ে জাতিসংঘকে উদ্বেগ জানানোর আহ্বান এইচআরডব্লিউর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের বিষয়ে ‘প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করতে’ জাতিসংঘের ‘পিস অপারেশনস’ বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল জিন পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এ মাসের শেষে তার বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। সেই সফরকে সামনে রেখে এ আহ্বান জানালো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি। এ খবর দিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকা।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে আগামী ২৫-২৬ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন ল্যাক্রোইক্স। ঢাকায় তিনি মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ নিয়ে এইচআরডব্লিউ-এর প্রধান অ্যাডভোকেসি অফিসার ব্রুনো স্ট্যাগনো উগার্তে এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শীর্ষ অবদানকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হলে জাতিসংঘের মানবাধিকার যাচাই নীতি যথাযথভাবে প্রয়োগ করার বিষয়ে জিন পিয়েরেকে জোর দিতে হবে আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের পাশাপাশি সরকারগুলোকেও নিশ্চিত করতে হবে, শান্তিরক্ষায় কর্মরতরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়।

বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বড় অবদানকারী দেশগুলোর একটি। বর্তমানে র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশ মিলে বাংলাদেশের ছয় হাজারেরও বেশি কর্মী বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন রয়েছে। এইচআরডব্লিউ-এর দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, বাংলাদেশে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সৈন্যদের জাতিসংঘের মিশনে মোতায়েন করার একটি বড় ঝুঁকি রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে বিশেষ করে র‌্যাব থেকে জাতিসংঘের মিশনে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতে পর্যাপ্ত যাচাই বাছাই করা হয় তা নিশ্চিতে ল্যাক্রোইক্সের উচিৎ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানানো।

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পেছনে হাত থাকার অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এইচআরডব্লিউ-এর সাম্প্রতিক বিবৃতিতে প্রধান অ্যাডভোকেসি অফিসার উগার্তে বলেন, বর্তমানে যে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চালু রয়েছে তা দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের সনাক্ত করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে জাতিসংঘের যাচাই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র উচ্চ পদে প্রয়োগ করা হয় কিংবা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এই সংস্থার বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে সীমিত পরিধি রয়েছে। ফলে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেও যে কেউ জাতিসংঘের পতাকার নিচে চাকরি পেতে পারে। এটি জাতিসংঘের জন্য নৈতিক দিক থেকে একটি হুমকি সৃষ্টি করে।

ভয়েস অব আমেরিকা র‌্যাবের ‘লিগাল এন্ড মিডিয়া’ শাখার পরিচালক খন্দকার আল-মইনের কাছে এই বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি। এছাড়া বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও ইমেইল করেছে গণমাধ্যমটি। কিন্তু তারাও কোনো প্রতিক্রিয়া পাঠায়নি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার রেকর্ড পর্যালোচনা করার সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ‘কমিটি এগেইনস্ট টর্চার’ একটি বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছিল, র‌্যাবের সঙ্গে কাজ করা কর্মীদের প্রায়শই জাতিসংঘ শান্তি মিশনে মোতায়েন করা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম বা অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত কেউ যাতে জাতিসংঘের মিশনে যেতে না পারে তা নিশ্চিতে একটি স্বাধীন যাচাই পদ্ধতি চালুরও পরামর্শ দিয়েছিল কমিটি এগেইনস্ট টর্চার।

সেই পরামর্শের কথা উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ-এর উগার্তে বলেন, জাতিসংঘের উচিত র‌্যাবের সঙ্গে যুক্তদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয়া থেকে নিষিদ্ধ করা। পাশাপাশি ল্যাক্রোইক্স যখন বাংলাদেশ সফর করবেন তখন তার জনসমক্ষে একটি নতুন মানবাধিকার যাচাই পদ্ধতির প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত। অন্যান্য বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠীও এ বিষয়ে উগার্তেকে সমর্থন করেছে।

রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর কর্মকর্তা অ্যাঞ্জেলিটা বেয়েনস বলেছেন, বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে ল্যাক্রোইক্সের এই সফর আয়োজিত হচ্ছে। চলতি বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৮ সালে দেশের সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। বেয়েনস বলেন, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশী নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি সম্পূর্ণ আস্থার প্রমাণ হিসাবে ল্যাক্রোইক্সের এই সফরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হতে পারে। এ জন্য তার উচিৎ প্রকাশ্যে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা অব্যাহত নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা।

হংকং-ভিত্তিক বাংলাদেশি অধিকার কর্মী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ল্যাক্রোইক্স এমন এক সময়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে আসছেন যখন বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ বছর ধরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘের একজন দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে ল্যাক্রোইক্সের উচিৎ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিলকে সম্মান করা। এ জন্য তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, শেখ হাসিনার সরকার তার রাজনৈতিক ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করার জন্য কিংবা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যে মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে তা বৈধ করার জন্য ল্যাক্রোইক্সের জাতিসংঘ পোর্টফোলিওকে ব্যবহার করতে না পারে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!