খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  কুয়েটের শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম শেষ হচ্ছে বিকাল ৩টায়, দাবি পূরণ না হলে আমরণ অনশনের ঘোষণা

বাংলাদেশ-সেভেন সিস্টার্স রুটের রেল প্রকল্প স্থগিত করলো ভারত

গেজেট ডেস্ক

ভারত-বাংলাদেশ উত্তেজনার মধ্যেই রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণ কাজ স্থগিতের মাধ্যমে তিনটি চলমান প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে রেলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে (সেভেন সিস্টার্স) যুক্ত করার পরিকল্পনা অনেকটাই বন্ধের দাঁড়প্রান্তে।

রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস লাইন এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, অন্য পাঁচটি প্রকল্পের সমীক্ষার কাজও স্থগিত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাংলাদেশ অতিক্রমকারী রুটের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে (সেভেন সিস্টার্স) মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনাকে ব্যাহত করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’ এবং ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার’ কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। একটি সূত্রের বরাতে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সংবাদ মাধ্যমটি।

নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজেদের রেল নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে বাংলাদেশকে এড়িয়ে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবছে দেশটি। একটি সূত্র বিজনেস লাইনকে জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার কোটি রুপি খরচের ব্যাপারে ভাবছে নয়াদিল্লি।

বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভারতের ল্যান্ডলকড উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য স্থবির হওয়া এসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এগুলো সরু ‘শিলিগুড়ি করিডোর’ বা ‘চিকেনস নেক’ এর ওপর নির্ভরতা কমাতে ডিজাইন করা হয়েছিল, যা এই অঞ্চলটিকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো নির্মাণ সামগ্রী বা অন্য উপকরণ আমরা পাঠাচ্ছি না। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সংযোগ রুটের অর্থায়ন এখন বন্ধ আছে। এটি আবার শুরু করতে প্রথমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারত অংশে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। এর আগে, ২০২৪ সালে ১২.৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের। এটি দু’দেশের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি।

স্থবির হয়েছে যেসব প্রকল্প
তিনটি ভারত-সহায়তা প্রকল্প যা এখন স্থগিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ১. আখাউড়া-আগরতলা ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ এবং খুলাবুড়া-সাহাবাজপুর রেল লাইন স্থাপন, ২. খুলনা – মংলা বন্দর রেল লাইন এবং ৩. ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প।

আখাউড়া-আগরতলা (ত্রিপুরা) ক্রস-বর্ডার রেল লিঙ্ক প্রকল্পটি প্রায় ভারত সরকারের ৪০০ কোটি রুপির অনুদান সহায়তার অধীনে সম্পাদিত হচ্ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬.৭৮ কি.মি. ডুয়েলগেজ রেললাইন এবং ত্রিপুরায় ৫.৪৬ কি.মি.সহ রেল সংযোগটির দৈর্ঘ্য ছিল ১২.২৪ কি.মি.। খুলাবুড়া-সাহাবাজপুর রেললাইন এই প্রকল্পেরই অংশ। এর লক্ষ্য ছিল বিদ্যমান বাণিজ্য রুট ব্যবহার করার পাশাপাশি নতুন ট্র্যাক স্থাপনের মাধ্যমে আসামের সাথে সংযোগ উন্নত করা।

খুলনা-মংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি, যা রেয়াতি লাইন অফ ক্রেডিট অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এই প্রকল্পে মংলা বন্দর এবং খুলনায় বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করার কথা ছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর মংলা ব্রডগেজ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতো। চুক্তি অনুযায়ী মোংলায় একটি টার্মিনালের অপারেশনাল অধিকার রয়েছে ভারতের।

এ ছাড়া ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালের জুনে। গত বছর পর্যন্ত ৫০ শতাংশেরও কম বাস্তবায়িত হয়েছে প্রকল্পটি। এর প্রায় ১৬০০ কোটি রুপি ভারতীয় সহায়তার মাধ্যমে হচ্ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর পাঁচটি আলাদা জায়গায় যে স্থান জরিপের কাজ চলছে সেগুলোর কাজও স্থগিত করা হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমটিকে জানিয়েছে অপর একটি সূত্র।

বিকল্প যে কৌশল নিচ্ছে ভারত
ভারত তার অভ্যন্তরীণ ও বিকল্প আঞ্চলিক কৌশল পরিবর্তন করছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। ক্ষমতা এবং নির্ভরযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য উত্তর প্রদেশ ও বিহারে লাইন দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে দেশটির সরকার। রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ জন্য জরিপ চালানো হচ্ছে।’

একই সঙ্গে ভারত-নেপাল রেল চুক্তি এবং ভুটানের উত্তর-পূর্বে নৈকট্যের মতো বিদ্যমান চুক্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে নয়াদিল্লি, ভুটান ও নেপালের মধ্য দিয়ে রেল সংযোগগুলো অন্বেষণ করা হচ্ছে। এই রুটগুলো যৌক্তিকভাবে জটিল হলেও এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কমবে বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা।

উদাহরণস্বরূপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত ও নেপালের মধ্যে উন্নত সংযোগের পূর্ববর্তী পরিকল্পনায় বিরাটনগর-নিউ মালের মধ্যে ১৯০ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া গালগালিয়া-ভদ্রপুর-কাজলি বাজার সেকশনে আরও ১২.৫ কি.মি. নতুন লাইনের নির্মাণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গে চিকেনস নেক অঞ্চলে সংযোগ উন্নতির লক্ষ্যে কুমেদপুর-আম্বারি ফালাকাটা অংশে ১৭০ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলা এবং বিহারের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করতে স্থাপন করা হবে আরও ২৫ কিলোমিটার নতুন লাইন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!