ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। তবে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এখন নৌকাও ব্যবহার করা যাচ্ছে না, আবার রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যানবাহনও চলতে পারছে না। তাই দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষরা। একইসঙ্গে এখনো পানিবন্দি রয়েছেন অনেক মানুষ। অনেক স্থানে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ চলছে।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সংকট কাটেনি। যারা আশ্রয়কেন্দ্র বা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছেন, তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত। ঘরের ধান-চাল পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবারের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। জেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে থাকায় কাজের সন্ধানে সহজে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পানির নিচে আছে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসল। এখনো ২৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। পানিবন্দি আছেন লক্ষাধিক মানুষ। সব মিলিয়ে বন্যার্তরা বিপদের মধ্যে সময় পার করছেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, বুধবার দুপুর থেকে কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, উব্দাখালীসহ সব নদ-নদীর পানিই দ্রুত কমছে। তবে এখনো উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদ-নদীগুলোয় পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে আছে। আশা করা যাচ্ছে, এসব নদ-নদীর পানি ধনু হয়ে মেঘনায় দ্রুত নেমে যাবে। অব্যাহত ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৬ অক্টোবর নেত্রকোনার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বধলা, বারহাট্টা ও সদর উপজেলায় আকস্মিক বন্যা হয়। ১৩১টি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েন লক্ষাধিক মানুষ।
শেরপুরে বন্যার আরও উন্নতি :
বৃষ্টি না হওয়ায় শেরপুরের ৫ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। স্থানীয় নদ-নদীর পানিও অনেক কমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষত চিহ্ন ক্রমে ভেসে উঠছে। সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতেই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো অনেক নিচু এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিকভাবে চলা ফেরা করতে পারছে না।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা চলমান রয়েছে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কার করার জন্য সরকারের কাছে টেউটিন ও নগদ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
ফুলপুর (ময়মনসিংহ) : ফুলপুরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। উপজেলার অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে থাকায় লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেক পরিবার খাদ্য সংকটে দিনাতিপাত করছে। উপজেলার ছনধরা, সিংহেশ্বর ও ফুলপুর ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া ফুলপুর পৌর সদর, রূপসী, বালিয়া, বওলা, ভাইটকান্দি ও রামভদ্রপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রামসোনা কুমারপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই জানান, এ গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার খাদ্য সংকটে রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। কুলিরকান্দা গ্রামের মফিদুল ইসলাম জানান, প্রায় ২৫০ পরিবার খাদ্য সংকটে থাকলেও কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি।
ধোবাউড়ায় উন্নতি : ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। বেরিয়ে আসছে ক্ষতচিহ্ন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে জনসাধারণের চলাচলে চরম দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। এখনো পানিবন্দি রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে ত্রাণ বিতরণ করেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) : রৌমারীতে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগ। কাঁচাপাকা রাস্তা ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। এদিকে পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাব। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি ও কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধরা।
খুলনা গেজেট/এইচ