প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা জটিলতায় ধুকছে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরী। তিন দশকেও গড়ে ওঠেনি ভালো কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান। উল্টো সুযোগ-সুবিধার অভাবে এখান থেকে ব্যবসা গুটাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ শিল্প ইউনিট।
শিল্প-কারখানার মালিকরা বলছেন, উদ্যোক্তা ও জেলার শিল্পনগরীতে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। নেই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশও। সুযোগ-সুবিধার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্প- কল কারখানা। নতুন উদ্যোক্তাও আসছে না। আগ্রহী হচ্ছে না বড় বিনিয়োগে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের অদূরে বিনেরপোতা এলাকায় ৪১টি শিল্প ইউনিট নিয়ে বিসিক শিল্পনগরীটির যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না থাকায় এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ১৮টি শিল্প ইউনিট। বাকি ২২টি ইউনিটের অবস্থাও ভাল না। কার্যত উৎপাদনে আছে মাত্র ছয়-সাতটি ইউনিট।
সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীর ক্ষুদ্র কারখানা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পান্ডে ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী সুরেশ পান্ডে জানান, নানা সমস্যার কারণে একের পর এক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এখানে। মোট ৪১টি ইউনিটের মধ্যে কার্যত উৎপাদনে আছে ছয় থেকে সাতটি ইউনিট, বাকিগুলো বন্ধ আছে। এর কারণ হিসেবে সুরেশ পান্ডে বলেন, ‘বিসিক শিল্প-নগরীটি চলছে নানা অধ্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। এখানে ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কেউ নেই। এখানকার কারখানাগুলো একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেই খবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না কেউ। ফলে এক এক করে ব্যবসায়ীরা এই শিল্পনগরী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ শিল্প নগরীতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা, সুপেয় পানির সংকট, সীমানা প্রাচীর না থাকা, প্রশস্ত সড়ক না থাকা। রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ঘাটতি। এসব সমস্যার পেছনে বিসিক কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন তারা। তবে বিসিক কর্মকর্তারা জানান, শিল্প-কারখানা বাড়াতে সরকার ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে। যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।
উদ্যোক্তা ও শিল্প-কারখানার মালিকরা বলছেন, জেলার শিল্পনগরীতে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। নেই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশও। প্রয়োজনীয় সুযোগ- সুবিধার অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ছে অনেক শিল্প- কারখানা। নতুন উদ্যোক্তাও আসছে না। আগ্রহী হচ্ছে না বড় ধরনের কোন বিনিয়োগে করেতে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিকের উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরীর ৪১টি ইউনিটের মধ্যে ১৮টির উৎপাদন বর্তমানে বন্ধ আছে। বাকি ২২টি কারখানায় উৎপাদন চলছে ঢিমেতালে। তাছাড়া সাতক্ষীরা বিসিকের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ড্রেন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বাকি কাজ পরবর্তী সময়ে শুরু হবে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অনেক সম্ভাবনাময় হওয়ার পরও সাতক্ষীরা বিসিকে কোনো বড় ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। দেশ যত শিল্পোন্নত হচ্ছে, ততই যেন পিছিয়ে পড়ছে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরী। অব্যবস্থাপনার কারণেই আজ এ দশা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, পদ্মা সেতু চালু হয়েছে, এমনকি বিদ্যুতের সমস্যাও নেই। অথচ বিসিক শিল্পনগরীর করুণ অবস্থা কাটছে না।’ সাতক্ষীরা বিসিককে টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য সদরের বিনেরপোতায় ১৫ দশমিক ৯৮ একর জমির ওপর বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়। ৯৬টি প্লটে মোট ৪১টি ইউনিট বা শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে এখানে।
খুলনা গেজেট/এনএম