দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রাসেলস ভাইপার সাপ আতঙ্কে বন অধিদপ্তরের বন্যাপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পাঁচটি হটলাইনের প্রতিটিতে ঘণ্টায় গড়ে ৫০টি করে কল আসছে। কোথাও কোনো সাপ দেখলেই আতঙ্কে কল করছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার সাপ মেরে কল করে পুরস্কারের টাকাও চাচ্ছেন এই দপ্তরের কাছে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বলছে, ফোনে জনগণের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা যাচ্ছে হত্যার শিকার ৮০ শতাংশ সাপই নির্বিষ।
রোববার (২৩ জুন) বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক ছানাউল্যাহ পাটোয়ারী গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রতি মিনিটে আমাদের কাছে কল আসছে। একটি কল রিসিভ করে কথা বলা অবস্থায় আরও দুই থেকে তিনটি কল আসছে। অধিকাংশ মানুষই আতঙ্কে কল করছেন। কেউ সাপ দেখে কল করছেন, কেউ সাপ দেখলে কী করবেন সেটা জানতে চাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার সাপ হত্যা করেও জানাচ্ছেন। তবে আমরা তথ্যদাতার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছবি নিয়ে দেখছি, হত্যার শিকার হওয়া সাপের মধ্যে রাসেলস ভাইপার নেই বললেই চলে। মৃত সাপগুলোর অধিকাংশই নির্বিষ এবং উপকারী।
তিনি আরও বলেন, রাসেলস ভাইপার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ প্রকৃতি থেকে তার খাদক কমে যাওয়া। এখন রাসেলস ভাইপার নিয়ন্ত্রণের নামে যেগুলো মারা হচ্ছে এর মধ্যে ঘরগিন্নি, অজগর, দারাজ, শঙ্খিনীসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ রয়েছে। এদের অধিকাংশই রাসেলস ভাইপারের খাদক। তারা রাসেলস ভাইপার খেয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে। অথচ জনগণ উপকারী সাপগুলোও মেরে ফেলছে।
ছানাউল্যাহ পাটোয়ারী বলেন, আমরা হটলাইনে কল করা সবাইকে অনুরোধ করছি সাপ না মেরে তাদের মতো থাকতে দিতে। কোনো সাপ নিজের জন্য কাউকে হুমকি মনে না করলে আক্রমণ করে না। আর রাসেলস ভাইপার গাছেও ওঠে না, ঘরেও আসে না। জমিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেই রাসেলস ভাইপারের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। আমরা মনে করছি, মানুষ যে সচেতন হয়েছে এটা ভালো দিক, তবে হত্যাটা বন্ধ করতে হবে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, গত তিনদিন ২৪ ঘণ্টা আমাদের ফোনগুলোতে কল আসছে। কেউ কেউ আতঙ্কে কল করছেন, সমাধান চাচ্ছেন। কেউ আবার শুধু শুধু কল করে আমাদের নারী কর্মকর্তাদের হয়রানি করছেন, এমন ঘটনাও আছে। তবে আতঙ্কে কল করা বা সাপ দেখলে কী করবে সেটা জানতে চেয়ে কল করার হারই বেশি।
তিনি আরও বলেন, যারা সাপ দেখে তথ্য দিচ্ছে আমরা তাদের ছবি পাঠাতে বলছি। কেউ মেরে ছবি পাঠাচ্ছেন, কেউ জীবিত ছবি দিচ্ছেন। কিন্তু যাচাই করে যা দেখছি, হত্যার শিকার সাপগুলোর ৮০ শতাংশেরও বেশি নির্বিষ বা উপকারী। তাই সাপ না মেরে তার মতো থাকতে দিতে বা বেশি সমস্যা মনে করলে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।
প্রতি বছর দেশে ছয় হাজারের মতো মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। এর মধ্যে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ জনেরও কম। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য যাচাই করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সাপের কামড়ে মাত্র ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে তারা।
খুলনা গেজেট/এইচ