মিতু হত্যা মামলায় মিথ্যা ও অসত্য তথ্য সরবরাহ করা এবং তা প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
এ মামলায় অপর আসামি বাবুল আকতারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবুকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালত এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এদিন আসামি লাবুর পক্ষে তার আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি লাবুকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন ও আসামি ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের সহকারী বেঞ্চ সহকারী মো. জুয়েল মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত বছরের ৩১ আগস্ট ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুলফিকার হায়াত ইলিয়াস হোসেনের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন। পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর ইলিয়াস হোসাইনের সম্পত্তি ক্রোক করা যায়নি অর্থাৎ সম্পত্তি পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ। এরপর আদালত ইলিয়াস হোসাইনকে আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ২৫ জুলাই একই আদালত মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ঐদিন আদালত এ মামলার অভিযোগ থেকে বাবুল আকতার ও তার বাবা মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়াকে অব্যাহতি দেন। অপরদিকে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন ও বাবুল আকতারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবুর বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া চার্জশিট গ্রহণ করেন।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. রবিউল ইসলাম বাবুল আকতার, ইলিয়াস হোসাইনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত অন্য দুই আসামি হলেন- বাবুল আক্তারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া। আসামিদের মধ্যে ইলিয়াস হোসেন পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এরপর গত ১১ মে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশেক ইমামের আদালত মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।
এর আগে ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ আনা হয়।
মামলার এজাহারে পিবিআই প্রধান অভিযোগ করে বলেন, আমার নেতৃত্বাধীন তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ে দেশের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকাকালে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতার প্রধান আসামি হিসেবে তদন্তে প্রকাশ পায়। তদন্তকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেল হাজতে থাকা বাবুল আকতার ও বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিক ইলিয়াসসহ বাকি আসামিরা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বাবুল আকতার ও অন্যান্য আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ‘স্ত্রী খুন স্বামী জেলে খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন। যা সম্পর্কে ৪ সেপ্টেম্বরে আমি অবগত হই।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধসহ তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইলিয়াস হোসাইন ভিডিওতে প্রচারিত বক্তব্যে দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি দেওয়া হয়। এছাড়া ভিডিওতে পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে আমার মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যার জন্য দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এর নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে।
পিবিআই প্রধান এজাহারে উল্লেখ করেন, ভিডিওতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস করা হয়। রাষ্ট্রের হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিরও অপপ্রয়াস করেছে।
এছাড়া এজাহারে ওই ভিডিও ডকুমেন্টারি বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে নানা প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন করেন বনজ কুমার।
খুলনা গেজেট/এনএম