রাজধানীর বঙ্গবাজার ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ (ডিএসসিসি) বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরইমধ্যে সিটি করপোরেশনের কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশও করেছে। আর এই সপ্তাহের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস তাদের প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বঙ্গবাজার ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের কারণ প্রায় একই বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। যদিও তদন্ত এখনও চলমান বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
কমিটির তদন্তে বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস বলছে, এই বঙ্গবাজার ও তার আশপাশের মার্কেটগুলোতে এই অগ্নিকাণ্ডটির সূত্রপাত মশার কয়েল কিংবা বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই। তদন্ত প্রতিবেদনে দুটি বিষয়ই উল্লেখ থাকবে। যদিও গত ১১ এপ্রিল প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে সিটি করপোরেশনে গঠিত কমিটি ‘বৈদ্যুতিক গোলযোগ’-কে কারণ হিসেবে নাকচ করে দিয়েছে। তারা বলছে, সিগারেট বা কয়েল থেকেই আগুন লেগে থাকতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৮ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। এরমধ্যে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে দুটি বিষয় পাওয়া গেছে। মশার কয়েল থেকে আগুন ছড়িয়েছে অথবা বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে দুটি বিষয়ই উল্লেখ থাকবে।
ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার ও নিয়মিত তদারকি না করায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বলে তদন্তে নিশ্চিত হয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) বলেন, ‘তদন্তে অনেক বিষয় আমাদের নজরে রাখতে হয়। কাছাকাছি অনেক কারণ থাকে। বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বৈদ্যুতিক গোলযোগ (শর্টসার্কিট) থেকে। নিউ সুপার মার্কেটে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, সেটা আমরা নিশ্চিতও হয়েছি। বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের কারণ এখনই চিহ্নিত করা যায়নি। তবে বেশিরভাগ সময় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বঙ্গবাজারেও একই কারণ হতে পারে আমরা প্রাথমিক ধারণা করছি। এছাড়া অন্য কোনও কারণেও হতে পারে। সেটা তদন্ত শেষ হলেই বোঝা যাবে।’
রমজান মাসে (৪ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৫০ ইউনিটের সর্বাত্মক চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। এই ঘটনায় সবকিছু পুড়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের কান্নার মাতম না থামতেই ১৫ এপ্রিল ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ সুপার মার্কেটে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এতে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
ডিএসসিসির গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর বঙ্গবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে প্রায় ৪ হাজার দোকান। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সসহ মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মোট ৩০০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের মালিক সমিতি বলছে, মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২২৬টি দোকান পুড়ে গেছে। আগুনে ৩৫০ কোটি টাকার মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এর আগে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তারা বলেছে, মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সিগারেটের আগুন অথবা মশার কয়েলের আগুন থেকে এই ঘটনা ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ছিল। দুটি মার্কেটের মালিক সমিতিকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিল তারা। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঢাকার বেশিরভাগ মার্কেট অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজধানীর ৫৮টি বিপণি বিতান পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সবক’টিই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এরমধ্যে ৯টি বিপণি বিতান অগ্নিকাণ্ডের জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৪৯টির মধ্যে ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৪টি মাঝারি মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ।
খুলনা গেজেট/কেডি