আজ ১৭ মার্চ, বুধবার। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১০১তম জন্মদিন আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে রাত আটটায় টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ পরিবারের আদরের ‘খোকা’। যিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির ‘মুজিব ভাই’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’। তাঁর হাত ধরেই আসে বাঙালির স্বাধীনতা, জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ৫৫ বছর বয়সে কিছু বিপথগামী সেনা কেড়ে নেন তাঁর প্রাণ। কিন্তু দেশের প্রতিটি কোনায় আজ উচ্চারিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম।
‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই…’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু কিংবা জন্মবার্ষিকীতে এ গানটি বাজানো হয় অবধারিতভাবেই। আজও সারা দেশে তা শোনা যাবে। জনতার নেতা মুজিব না থাকলেও তাঁর আদর্শ ও অনুপ্রেরণা আজও বাঙালির মননে গেঁথে আছে। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, কৃতজ্ঞচিত্তে আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করবে বাঙালি। এই দিনটি জাতীয় শিশু কিশোর দিবস হিসেবেও উদযাপিত হয়।
এদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার দলটির দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করবে দলটি। বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। তার আগে সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন।
বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ আয়োজিত কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত নেতৃবৃন্দ অংশগ্র নেবেন। এছাড়াও সকলকে ঘরে বসে গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত কর্মসূচি দেখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায় ও সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ২১ মার্চ বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ খুলনায় যত আয়োজন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর চলচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এলইডি স্ক্রীনে স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তথ্যচিত্র প্রদর্শন হবে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এ আয়োজন।
জেলা প্রশাসন আয়োজিত ১৭ মার্চের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তোপধ্বনি, পরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল আটটায় বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধৃর ভাস্কার্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সুবিধামত সময়ে মন্দির মসজিদে বিশেষ প্রার্থনা, হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খুলনায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন, কেসিসি ও সরকারি ভবনসমূহে আলোকসজ্জা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নগরীর বিভিন স্থানে সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পুস্তক, ডকুমেন্টরী প্রদর্শন ও আতশবাজির আয়োজন।
১৭ মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন’।
মঙ্গলবার এক প্রেসব্রিফিংয়ে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, খুলনা জেলা প্রশাসন ১৯ হাজার দুইশত বার কোরআন খতম এবং বৃহৎ পরিসরে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার (১৭ মার্চ) বিকেল সাড়ে চারটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে ছয় হাজার ছয়শত ৬৬ জন আলেম, সহস্রারাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মুসল্লি সমবেত হয়ে বিকেল পাঁচটায় আসরের নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্য এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ মার্চের পূর্বেই খুলনা জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও হেফজখানায় ১৯ হাজার দুইশত বার পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে খতম সম্পন্ন হবে। খুলনা জেলার এক হাজার আটশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, এক হাজার দুইশত মসজিদের মুসল্লিসহ প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ অনলাইন জুম প্রযুক্তিতে এই দোয়া ও মোনাজাতে যুক্ত হবেন। সকল কার্যক্রম করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুশৃঙ্খল পরিবেশে সম্পন্ন হবে।
নগর আ’লীগ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে দলীয় কার্যালয় আলোকসজ্জাকরন, সকাল সাড়ে ৭টায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, সকাল ৮টায় খুলনা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, সকাল ৯টায় ১০১ পাউন্ডের কেককাটা, বাদ মাগরিব দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচিতে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ মিছিল সহকারে উপস্থিত হবে। খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগ অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা।
নগর যুবলীগ : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে নগর যুবলীগ দিনব্যাপি কর্মসুচী গ্রহন করেছে। কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে সকালে ভোর সাড়ে সাতটায় দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন শঙ্খ মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে। সকাল ০৮টায় বাংলাদেশ বেতার খুলনা কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু’র প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পন। সকাল ০৯টায় শঙ্খ মার্কেটস্থ দলীয় কর্যালয়ে কেঁক কাঁটা। দুপুর সাড়ে তিনটায় খুলনা প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা।
নগর ছাত্রলীগ : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগ ১৭ মার্চ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহন করেছে। কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে সকাল ৭ টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, স্থানঃ বাংলাদেশ বেতার, খুলনা এবং বেলা ১১ টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত খুলনা সরকারী শিশু সদন এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কেককাটা, পুরস্কার বিতরণ ও শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ। কর্মসুচীতে মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীদের উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল।
খুবি : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯ টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৯টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য কালজয়ী মুজিব এ পুষ্পমাল্য অর্পণ, বাদ যোহর খুবি জামে মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে প্রার্থনা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা। এছাড়া মেইন গেট, মেইনগেইট থেকে হাদি চত্বরের রাস্তা পর্যন্ত, প্রশাসনিক ভবন ও কালজয়ী মুজিব চত্বরে আলোকসজ্জা করা হবে।
কুয়েট: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এ যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।কর্মসূচীর মধ্যে ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের বাসভবন ও বিভিন্ন হলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯ টায় ক্যাম্পাস্থ বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল ১০ টায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে আলোচনা সভা এবং আসর বাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
কেইউজে : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের (কেইউজে) পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ১০টায় খুলনা প্রেসক্লাবস্থ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, পরে প্রেসক্লাব চত্বরে কেককাটা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত কর্মসূচিতে ইউনিয়নের সকল সদস্যকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে বিশেষভাবে আহবান জানিয়েছেন সভাপতি মো. মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ।