বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সামনের যে নির্বাচন হবে এতো সহজ না। এই নির্বাচন বাংলাদেশের যে কোন নির্বাচনের চেয়ে অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে। মানুষের ধ্যান ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। কেউ যদি কোন ভূল করে থাকে তাহলে একজন নেতা হিসেবে তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসা আপনার দায়িত্ব।
সোমবার (০২ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে অনুষ্ঠিত ‘রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি প্রদত্ত ৩১ দফা বিষয়ক খুলনা বিভাগীয় কর্মশালায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় এবং খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যামিলি কার্ড এবং কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড তৈরি করবো। ফ্যামিলি কার্ডটি হবে পরিবারের মা বা স্ত্রীর নামে। এতে তার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা বাড়বে। একই সঙ্গে কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড করা হবে। যা প্রতি মৌসুমে কৃষকের সার-বীজ বা আর্থিক সহযোগিতা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবে।
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিএনপির সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমরা ক্ষমতায় যায়নি, যাবো কিনা জানি না। তখনই ক্ষমতায় যেতে পারবো, যখন জনগনের সমর্থন পাবো। নেতাকর্মীদের সকল কর্মকান্ড হচ্ছে বিএনপির আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে এমন হতে হবে যাতে জনগন আপনার সাথে থাকে, বিএনপির সাথে থাকে। দলকে রক্ষা করা, সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সকলের। আপনাকে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। জনগনের সঙ্গে থাকুন, জনগনকে সঙ্গে রাখুন। বাংলাদেশের জনগনের আস্থা বিএনপির উপর আছে। এটি ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার এবং আমাদের সকলের।
তারেক রহমান বলেন, দেশ সকল মানুষের জন্য। গত কিছুদিন সমাজের কিছু ব্যক্তি সংস্কারের কথা বলছে। গত ৫ মাস আগেও তারা বলেনি। কিন্তু বিএনপি ২ বছর আগে থেকে বলছে। বিএনপি দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে। ৩১ দফা তারই প্রমাণ। গত ৩-৪ মাস সংস্কারের যে কথা বলছে। তার সবকিছুই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। এই ৩১ দফা শুধু বিএনপির তাই নয়, বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক সকল দলের।
তিনি বলেন, ৩১ দফা সফল করতে যে কোন মূল্যে জনগনের সমর্থন রাখতে হবে। দলের পক্ষে পরিকল্পনা নিতে হবে। কিভাবে জনগনকে পাশে রাখবেন। সব কিছুর লক্ষ্য হচ্ছে জনগনের সমর্থন আমাদের পক্ষে রাখা। একইসাথে আমাদের পরিকল্পনা যাতে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি। ৩১ দফার সকল কিছু জনগনের মাঝে নিয়ে যেতে হবে। জনগনের ঘরে ঘরে পৌছে দিতে হবে। একইসাথে আমাদের প্রতি জনগনের আস্থা যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ১৭ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আপনারা সংগ্রাম করে যেভাবে টিকে ছিলেন, তার থেকে সহজ হবে এই কাজটা জনগনের ঘরে পৌছে দেওয়ার জন্য। এতো কঠিন পথ যদি আপনারা পাড়ি দিয়ে আসতে সক্ষম হয়ে থাকেন। তাহলে একটু কষ্ট করলেও ৩১ দফা আমরা জনগনের মাঝে নিয়ে যেতে পারি। এই কাজ আপনারা খুব সহজের সকলকে সাথে নিয়ে করতে সক্ষম হবেন।
তারেক রহমান বলেন, নারীর যোগ্যতা ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করা উচিৎ। এটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা উচিত। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে নারীদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা ফ্রি করে দিয়েছিলেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করবো। প্রান্তিক মানুষকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিনিমাম সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো। এটি সব শ্রেণি পেশার মানুষ পাবে। ফ্যামিলি কার্ডটি পরিবারের মা বা স্ত্রীর নামে দেওয়া হবে। এরমাধ্যমে তার মর্যাদা বাড়বে। আর যে অর্থ শাস্রয় করবে সেই অর্থ সন্তানের স্বাস্থ্য ও লেখাপড়ায় ব্যয় করবে। এতে ভবিষ্যৎ সুন্দর একটি প্রজন্ম তৈরি হবে। সঞ্চিত অর্থ ৫ থেকে ১০ বছর পর তার অর্থনৈতিক শক্তি সৃষ্টি হবে। এতে পরিবারে তার আত্মমর্যাদা বাড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপন, নদী ও খাল খনন করতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলায়ও এগিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া তিনি ৩১ দফার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন নেতাকর্মীদের কাছে।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রের সম্পদ দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য। বিশেষ কোন ব্যক্তির জন্য নয়। দেশের সম্পদ কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি আমরা চেষ্টা করবো।
খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আনিদ্য ইসলাম অমিতদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মিডিয়ার সেলের আহবায়ক ডঃ মওদুদ আলমগীর পাভেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল,বিএনপি’র তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, বিএনপি’র সহ ত্র্যান ও পুনর্বাসন সম্পাদক এডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এমএম