গাজায় চলমান নৃশংস ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং মানবিক সহানুভূতি জাগ্রত করার লক্ষ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একটি ব্যতিক্রমী গণসমাবেশ। শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে ‘মার্চ ফর গাজা’।
এই সমাবেশ সফল করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে মঞ্চ নির্মাণ, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন এবং জেনারেটর বসানোর কাজ। প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য উদ্যানে স্থাপন করা হয়েছে ২০০টি মাইক।
মঙ্গলবার বিকেলে প্রস্তুতির অগ্রগতি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক। প্রস্তুতি দেখে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং সর্বস্তরের মানুষকে ‘মার্চ ফর গাজা’ সফল করার জন্য আহ্বান জানান।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। আয়োজকরা জানিয়েছেন, গাজার নিরস্ত্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক জনমত গঠনের উদ্দেশ্যেই এই আয়োজন।
এই কর্মসূচি শুরুর আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামা, ইসলামিক স্কলার, ক্রীড়াবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশেষ করে প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী এক ফেসবুক পোস্টে দেশের খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা জুমার খুতবায় এই কর্মসূচি সম্পর্কে মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করেন। তার এই আহ্বান ‘মার্চ ফর গাজা’কে জাতীয় পর্যায়ের একটি মানবিক ও ধর্মীয় সংহতির প্রতীকে রূপ দিয়েছে।
এছাড়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং দেশের সব শ্রেণির মানুষকে এতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানা ও তাইজুল ইসলাম, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করীম আবরার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম, অভিনেতা তামিম মৃধা, টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক।
আয়োজকদের প্রত্যাশা, ঢাকার এই গণসমাবেশ গাজার নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হবে।
এদিকে আয়োজকদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুটি বিশেষ নির্দেশনা ও চারটি সাধারণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ নির্দেশনা দুটি হলো—শনিবার টিএসসির মেট্রোস্টেশন বন্ধ থাকবে ও সব পরীক্ষার্থীর জন্য রাস্তা বিশেষভাবে উন্মুক্ত থাকবে। আর সাধারণ নির্দেশনাগুলো হলো—গণজমায়েতে অংশগ্রহণকারীরা নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সামগ্রী (পানি, ছাতা, মাস্ক) সঙ্গে রাখবেন ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন; যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য–শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী–স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন; রাজনৈতিক প্রতীকবিহীন সৃজনশীল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড, শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করার অনুরোধ এবং দুষ্কৃতকারীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে সক্রিয় থাকতে হবে, প্রতিরোধ গঠনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে।
খুলনা গেজেট/এইচ