ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইঙ্গিত দিয়েছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে চায় ব্রিটেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিস্তিনিদের একটি রাজনৈতিকক্ষেত্র দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। নভেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি অঞ্চলটিতে চতুর্থবার সফর করবেন।
ওয়েস্টমিনস্টারের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্যামরন বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কেমন হবে তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব যুক্তরাজ্যের। ফিলিস্তিনি জনগণকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে ‘অপরিবর্তনীয় অগ্রগতি’ দেখাতে হবে।
রক্ষণশীল মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিলকে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য জাতিসংঘসহ মিত্রদের সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে। এটি বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করবে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েলকে গাজায় আরো মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি ‘হাস্যকর’, ব্রিটিশ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা সীমান্তে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
ডেভিড ক্যামেরন বলেন, গত ৩০ বছর ইসরায়েল তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতা স্বীকার করলেই শান্তি ও অগ্রগতি হবে বলে তিনি দাবি করেন।
ব্রিটেন দীর্ঘদিন ধরে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে সমর্থন করেছে, যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা আলাদা দেশে পাশাপাশি থাকতে পারে।
কিন্তু ক্যামেরন বলছেন, ব্রিটেন একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক ও কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিতে পারে এবং তা চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে নয়, বরং আলোচনার সময়েই। একই সময়ে গাজা শাসন করতে সক্ষম ‘টেকনোক্র্যাট এবং ভালো নেতাদের’ নিয়ে ‘দ্রুত’ একটি নতুন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে বলেও জানান তিনি।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, এসবের সঙ্গে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ফিলিস্তিনি জনগণকে একটি রাজনৈতিকক্ষেত্র প্রদান কর, যাতে তারা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের অপরিবর্তনীয় অগ্রগতি এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দেখতে পায়।
তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের একটি দায়িত্ব রয়েছে। কারণ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রটি কেমন হবে, এতে কী থাকবে, কিভাবে কাজ করবে এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে জাতিসংঘসহ মিত্রদের সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা শুরু করা উচিত।’
ক্যামেরন বলেন, এ ছাড়া একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, নিশ্চয়তা দিতে হবে যে হামাস ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ চালাবে না এবং গোষ্ঠীটির নেতারা গাজা ছেড়ে চলে যাবে। এমন চুক্তি ‘কঠিন’ হলেও অসম্ভব নয়।
গাজায় যুদ্ধের অবসানের চলমান প্রচেষ্টার বিষয়ে ক্যামেরন বলেন, যুদ্ধে একটি বিরতি এখন প্রয়োজন এবং আলোচনার বিষয়ে ‘আশাজনক লক্ষণ’ রয়েছে। ‘এমন একটি পথ আছে, যা আমরা এখন উন্মুক্ত দেখতে পাচ্ছি, যেখানে আমরা সত্যিই অগ্রগতি করতে পারি। শুধু সংঘাতের অবসান ঘটাতে নয়, বরং এমন একটি রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার ক্ষেত্রে অগ্রগতি রয়েছে, যা কয়েক মাসের জন্য শান্তির পরিবর্তে বছরের পর বছর শান্তি আনতে পারে।’
তিনি বলেন, আসল চ্যালেঞ্জ হবে ‘যুদ্ধে ফিরে না গিয়ে সেই বিরতিটিকে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতিতে পরিণত করা। যদিও এটি অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন, যদিও অতীতে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তবে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না। গত ৩০ বছরে আমরা শুধু ব্যর্থতা দেখেছি। এটি ইসরায়েলের জন্য ব্যর্থতার গল্প। কারণ তাদের একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি ছিল, তাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, তারা প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষায় বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু তারা একটি রাষ্ট্র দিতে পারেনি। প্রতিটি পরিবার নিরাপত্তা চায়। গত ৩০ বছর তারা ব্যর্থ হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ টিএ