ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন আক্তারুজ্জামান হাসু (৫৫) নামে ইসলামী ব্যাংকের এক এজেন্ট মালিক।
আক্তারুজ্জামান ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদর বাজারের মৃত আব্দুর রশিদ মিয়ার ছেলে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রায় ৪০ জন গ্রাহক ইসলামী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখায় গিয়ে জানতে পারেন তাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মালিক আক্তারুজ্জামান নিজের এজেন্ট অ্যাকাউন্টের চেক দিয়ে অভিনব কৌশলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন।
জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের ভাটদী বাজারে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট জামান ট্রেডার্স নামে একটি আউটলেট নিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেন আক্তারুজ্জামান হাসু।
গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভাটদী বাজার ইসলামী ব্যাংকের আউটলেটের কার্যালয়ে গিয়ে অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে হতাশ হন কয়েকজন গ্রাহক। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শাখাটি তালাবদ্ধ দেখে এজেন্ট ও শাখাটিতে কর্মরত ম্যানেজার এবং কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। শাখাটির প্রধান হিসাব রক্ষক মো. বাদশা মিয়া গ্রাহকদের জানান, একাধিক গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর পালিয়েছেন মূল এজেন্ট আক্তারুজ্জামান হাসু।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রায় চল্লিশ জন গ্রাহক ইসলামী ব্যাংক ফরিদপুরের বোয়ালমারী শাখায় গিয়ে জানতে পারেন তারা প্রতারিত হয়েছেন। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না করে এজেন্ট আক্তারুজ্জামান তার এজেন্ট অ্যাকাউন্টের চেক দিয়ে অভিনব কৌশলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এসময় নিজেদের জমাকৃত টাকা নিজ নামের অ্যাকাউন্টে জমা না হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। সারাদেশে ইসলামী ব্যাংকের সুনাম থাকায় নিজেদের এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে এফডিআর করেছিলেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। গ্রাহকদের জমা টাকার রসিদের পরিবর্তে এজেন্ট জামান ট্রেডার্সের একটি হিসাবের ব্যাংক চেক দেওয়া হয় প্রত্যেককে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক হেনা পারভীন জানান, গত ২২ জুলাই আমি ১২ লাখ টাকার একটি এফডিআর করি। আমাকে জামান ট্রেডার্স নামে ইসলামী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার একটি হিসাবের ১২ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এখন শুনছি ব্যাংকের উদ্যোক্তা এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
বোয়ালমারী উপজেলার মাধবপুর গ্রামের রুখসানা খানম জানান, তিন লাখ টাকা এজেন্ট ব্যাংকে এফডিআর করেছিলাম। আমাদের একটি চেকও দেয়। আজকে অ্যাকাউন্টে দেখছি কোনো টাকা জমা নেই। অনেক কষ্ট করে এই টাকাটা জমা করেছিলাম। এখন আমার টাকার কি হবে জানি না।
একই উপজেলার কুন্ডুরামদিয়া গ্রামের চুন্নু সেখ নামের অপর এক গ্রাহক বলেন, ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন শুনছি টাকা নেই।
আউটলেট শাখার সহকারী হিসাবরক্ষক মো. আশিক জানান, আউটলেটের মালিক আক্তারুজ্জামান আমাদের বলেছেন এফডিআর এর টাকা বোয়ালমারী শাখায় জামান ট্রেডার্সের মূল হিসাবে জমা হবে। গ্রাহকদের এই অ্যাকাউন্টের চেক দিলেই হবে। আমরা তার কথা মতো কাজ করে এসেছি। এ বিষয়ে শাখাটির হিসাবরক্ষক মো. বাদশা মিয়া ভালো বলতে পারবেন।
আউটলেটটির প্রধান হিসাবরক্ষক মো. বাদশা মিয়া বলেন, আমাদের ব্যাংকের মালিক আক্তারুজ্জামানের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করেছি। যখন আমি বুঝতে পারি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে তখন মালিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান- তিনি না থাকলেও তার ভাই বোন আছে তারা টাকা পরিশোধ করে দেবে। আমাদের আউটলেটের প্রায় ৫০ জন গ্রাহকের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন তিনি। মালিকের মোবাইল নম্বরও গত ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংক বোয়ালমারী শাখার অন্তর্ভুক্ত ভাটদি জামান ট্রেডার্স আউটলেটের মালিক আক্তারুজ্জামান হাসুর মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকের ফরিদপুরের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মুহিত শেখ বলেন, ভাটদী বাজারের আউটলেট জামান ট্রেডার্সের গ্রাহকরা এসেছিল। তাদের সঙ্গে এজেন্ট আক্তারুজ্জামান চেক দিয়ে কিছু লেনদেন করেছেন। এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বর্তমান তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। ইসলামী ব্যাংকের একটি ব্র্যান্ড রয়েছে আমাদের নাম করে যদি তিনি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এএজে