খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার

প্রীতি হত্যার দায় থেকে বাঁচতে মরিয়া স্বামী সৌমিত্র ধর

অভয়নগর প্রতিনিধি

যশোরের অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের আড়পাড়া এলাকায় তদবির করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রীতি হত্যার খলনায়ক স্বামী সৌমিত্র ধর। তিনি ম্যানেজ করতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়-ঝাপ শুরু করেছেন।

প্রীতি মন্ডল উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহরমশিহাটি গ্রামের উত্তম মন্ডলের মেয়ে। প্রীতি মন্ডল অনার্স প্রথম বর্ষে বাংলা বিভাগে যশোর মহিলা কলেজে পড়াশুনা করতেন।স্বামী সৌমিত্র ধর সুন্দলী ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের অমর ধরের ছেলে। সৌমিত্র ধর পেশায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে কর্মরত আছেন।

জানা গেছে, অভয়নগরে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় লাশ রেখে পালিয়েছে স্বামী। এ শিরোনামে জাতীয়, স্থানীয় ও বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে প্রশাসন নড়ে-চড়ে বসে এবং পরে ওই লাশটি উদ্ধার করে অভয়নগর থানা পুলিশ যশোর মর্গে পাঠায়। এ কারণে সন্দেহের তীর এখন স্বামী সৌমিত্র ধরে উপর যেয়ে বর্তায়।

এলাকাবাসীরা জানায়, আড়াপাড়া গ্রামের গৃহবধু প্রীতি মন্ডল একটা ভালো মেয়ে ছিল। সে খুব নম্র-ভদ্র প্রকৃতির ছিল। সে সবার সাথে ভাল ব্যববহার করত। কিন্তু দেড় বছর ধরে স্বামীর সংসারে এসে কিছুই পায়নি। পায়নি সংসার। পেয়েছে শুধু ঝগড়া বিবাদ । সে তার শশুরবাড়িতে লাশ হয়ে পড়ে রইল। প্রায় ঝগড়া বিবাদ হলে বাপের বাড়িতে যেয়ে থাকতো। দেড় বছরে ২৫ থেকে ৩০ বার বাপের বাড়িতে উঠতো। তার স্বামীটা নেশা করত। নেশা করে মাঝে মাঝে মারধার করত বলে জানায় এলাকাবাসী।

প্রীতির বাবা উত্তম মন্ডল বলেন, আমার মেয়েকে হত্যার পর এবং সেনাসদস্য হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। তিনি আরও জানান, মেয়ের স্বামীর বাড়ি থেকে খরব পায় আমাদের মেয়ে মারা গেছে। সাথে সাথে আমরা তার স্বামীর বাড়ি আড়পাড়াতে যায়। যেয়ে দেখি খাটের উপর মেয়ের মরদেহ পড়ে আছে। পরে থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরিকল্পিত ভাবে মেয়েকে মেরে পালিয়েছে তার স্বামী। এমনকি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থাও করেনি তার পরিবার।

তিনি বলেন, মাদকাসক্ত জামাই আমার মেয়েকে হত্যা করেছে, মঙ্গলবার যশোরে কোর্টে উকিলবারে যেয়ে হত্যার আলামত লোপাট করতে তদবির চালায় প্রীতির স্বামী সৌমিত্র ধর ও তার পরিবার সদস্যরা।

প্রীতির বাবা উত্তম মন্ডল সন্দেহ পোষণ করে বলেন, আজকে টাকার বিনিময়ে সত্যকে ধামাচাপা দিতে চাই । তাহলে মেয়ে আত্মহত্যার দায় স্বীকার করা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। আমি সাংবাদিকদের টাকা দিতে পারবো না। আমি গরীব চাষী আমার পক্ষে টাকা দিয়ে সাংবাদিক কেনার মতো পরিস্থিতি নেই।

আরও পড়ুন: অভয়নগরে গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু, লাশ রেখে পালিয়েছে স্বামী

প্রীতি দাদা অমার বিশ্বাস বলেন, আপনারা আশ-পাশে খোঁজ নিয়ে দেখেন আসলে আমাদের ভগ্নিপতি সৌমিত্রের পক্ষে লোকজন কি বলে। যদি তার এলাকার মানুষ তার পক্ষে কথা বলে তাহলে তাদের উপরে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। এসময় অমার বিশ্বাস আরও বলেন, তারা যদি অপরাধ না-ই করে থাকবে তাহলে কেন আমাদের বোনকে রেখে পালিয়েছে। আর কেন-ই বা কোর্টে যেয়ে তথ্য লোপাট করতে চাইছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ময়নাতদন্তের রির্পোটের জন্যে তো আমরা অপেক্ষা করছি, আগে রিপোর্ট তো আসবে। এছাড়াও আমার মামাকে দোষারোপ করে সংবাদে যে শিরোনাম করা হয়েছে তা কতটুকু সত্য সেটাও যাচাই করে দেখুন। আমার বোনের মৃত্যুর পর আমরা এমনিতেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি তার মধ্যে সৌমিত্রের বাড়ি ঘরে ভাংচুর কখন করলাম। সেটাও খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

এসময় নাম প্রকাশে না করার শর্তে অনেকেই বলেন, সৌমিত্র সেনাবাহিনীর চাকরি করে, যে কারণে সত্যকে লোপাট করতে অসাধু সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে হয়তো উত্তম মন্ডলকে ফাঁসিয়ে নিজের চাকরিকে স্থায়িত্ব করার চেষ্ঠা করেছে। তবে আমরা যতদূর জানি সেনাবাহিনী একটি পবিত্র বাহিনী তারা যদি দায়িত্ব নিয়ে তদন্ত করে তাহলে অবশ্য সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

সাংবাদিক পরিচয়ে ব্যক্তব্য নেওয়ার সময় সৌমিত্র ধর বলেন, আমাকে চেনেন, আমি সেনাবাহিনীর কি? আপনি কেন মাদক খান কেন এক প্রশ্ন’র জবাবে তিনি বলেন, আমি ফেনসিডিল খায়না আমি গাজাঁ খায়। আমি আমার বউকে বাড়ির সবার অমতে বিয়ে করে ছিলাম। তাকে আমার বাড়ির লোকজন মেনে নেয়নি। আমার স্ত্রী আমার কথা শুনতো না। তাই মাঝে মাঝে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। যে কারণে প্রায় বাবার বাড়ি যেয়ে থাকতো।

আরো এক প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, আমি মানষিক হতাশায় ভুগছিলাম যে কারণে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

আপনার ফোন বন্ধ কেন তার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে অনেক লোকজন ডির্স্টাব করছে, সে কারণে ফোন বন্ধ রেখেছি।

প্রীতির শাশুড়ি স্বপ্না মন্ডল বলেন, নবমী পূজায় শাড়ি কেনাকাটা বিষয় নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়।

অভয়নগর থানার অফির্সাস ইনর্চাজ এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। ময়না তদন্তের জন্য যশোর মর্গে পাঠানো হয়। রির্পোট পেলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে মৃত্যুর রহস্য।

উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর ভোররাতে প্রীতি মন্ডলের মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় লাশ রেখে পালিয়ে যায় স্বামী। পরে ওই লাশটি উদ্ধার করে অভয়নগর থানা পুলিশ এবং ময়না তদন্তের জন্য যশোর মর্গে পাঠায়।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!