জীবনের সোনালী সময় ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে কাটিয়েছেন কিংবদন্তি ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু। সেই ক্লাব প্রাঙ্গনে শেষবারের মতো এলেন নিথর দেহে। তাকে এক নজর দেখতে উপস্থিত হন ক্রীড়াঙ্গনের সর্বস্তরের ব্যক্তিবর্গরা। ঢাকা জেলা প্রশাসন রাষ্ট্রীয় গার্ড অফ অনার দিয়েছে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়কের মোহামেডান থেকে শেষ বিদায়টা হয়েছে রাজসিকই।
ক্লাব প্রাঙ্গনের মাঠে ছোট্ট মঞ্চে রাখা হয় পিন্টুর মরদেহ। জানাজার আগে ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। এরপর ক্লাব, বিভিন্ন ফেডারেশন, অলিম্পিক এসোসিয়েশন,সাবেক খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। মোহামেডানের সমর্থক থেকে ক্লাবের স্থায়ী সদস্য এবং ক্লাব মসজিদের ইমাম আওলাদ কিংবদন্তী পিন্টুর জানাজা পড়ান।
মোহামেডান ক্লাবে পিন্টুর জানাজায় এসেছিলেন তার অন্যতম সতীর্থ মেজর হাফিজ। তিনি বলেন, ‘সে মোহামেডানের চীনের প্রাচীর। মোহামডোন ক্লাবের অনেক জয় ও ড্র হয়েছে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সে। তিনি কত বড় মাপের খেলোয়াড় ছিলেন সেটা এই সময়ে অনেকের পক্ষে বোঝা খুব দূরহ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মারকানী খেলোয়াড়দের মাঝেও সে পাকিস্তান জাতীয় দলে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ছিল। পাকিস্তান দলের চেয়ে মোহামেডানের জার্সিতে খেলা কঠিন ছিল। সেই সময় সে টানা আট বারের অধিনায়ক। ফলে খেলোয়াড় হিসেবে তার উচ্চতা কোন পর্যায়ের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
মোহামেডান ক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোসাদ্দেক আলী ফালু বলেন, ‘সমর্থক থেকে আমি ক্লাবের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি অনেক দিন। পিন্টু ভাইয়ের ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা অন্য রকম পর্যায়ের। বৃদ্ধ বয়সে ক্লাবের সাফল্যে উৎসব করতেন আবার খারাপ ফলাফলে বেদনাক্রান্ত হতেন।’
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের শীর্ষ ফুটবলাররা গঠন করেছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ফুটবল খেলার মাধ্যমে দেশের মানুষের মুক্তির পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরি করেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। সেই দলের গর্বিত অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু।
কিংবদন্তি এই ফুটবলারের নেতৃত্বে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৬টি ম্যাচে অংশ নিয়েছিল। এর ১২টিতেই জিতেছিল স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ওই ম্যাচের টিকিট বিক্রির অর্থ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল তুলে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে।
এছাড়া ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দেন জাকারিয়া পিন্টু। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও প্রথম অধিনায়ক।
খুলনা গেজেট/এএজে