খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র দেশে ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিতের অন্যতম বাধা : সিপিডি
  সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত

প্রাণসায়ের খাল দখল দূষণ ও সংরক্ষণে বেলা’র আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল দখল দূষণ ও সংরক্ষনের জন্য পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আইনি নোটিশ প্রদান করেছে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না এই নোটিশ প্রদান করেন।

কার্যকরী প্রতিকার চেয়ে সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়, সচিব পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, চেয়ারম্যান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, মহাপরিচালক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মহাপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ভবন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা, পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর, মেয়র সাতক্ষীরা পৌরসভা, নির্বাহী প্রকৌশলী সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এবং উপপরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর, সাতক্ষীরাকে এই নোটিশ প্রদান করা হয়।

নোটিশে বলা হয়, সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে প্রাণসায়ের খাল। খালটি কাটিয়া মৌজার আর এস ২৩৪০ দাগে অবস্থিত। সাতক্ষীরার বেতনা ও মরি চাপ নদীর সংযোগকারী এ খালের দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার। খালটি বেতনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে শহরের আপার প্রান্ত (উজানে) থেকে আগত খেজুরডাঙ্গা খালের সাথে শহরের থানাঘাটা নামক স্থানে মিলিত হয়ে নাম অপরিবর্তিত রেখে মরিচ্চাপ নদীতে পতিত হয়েছে। শহরের পানি নিষ্কাশনে অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এ খাল। বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ খাল হিসেবে এ খালের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। একসময় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে এ খালের অবদান ছিল অপরিসীম।

দখল ও দূষণে দেশের অন্যান্য নদী-খালের মতো এ খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। খালটি দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান, ঘর-বাড়িসহ নানা অবৈধ স্থাপনা। সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ -১ এর কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে ৮২০ জন অবৈধ দখলদার এবং ১৬৮ টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করলেও অদ্যাবধি দখলমুক্ত হয়নি প্রাণসায়ের খাল। দখলের পাশাপাশি খালটির দু‘পাশে এবং খালের মধ্যে পলিথিন-প্লাষ্টিকসহ নানান অপচনশীল ও ক্ষতিকর বর্জ্য ফেলে খালটির পানি দূষিত করছে। সাতক্ষীরা বাজারের অননুমোদিত কসাইখানার মাধ্যমে গবাদি পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য সরাসরি খালটিতে ফেলা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে বাজার ও পাশ্ববর্তী আবাসিক এলাকার ড্রেনের সংযোগ রয়েছে এ খালে। গৃহস্থলী বর্জ্য নিয়মিত এ খালে ফেলা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে খালটি তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট হারিয়ে একটি পঁচা ডোবায় পরিণত হয়েছে।

প্রাণসায়ের খালের আপস্ট্রীমে (উজান প্রান্তে) খেজুরডাঙ্গা খালে একটি জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় এবং খালের শেষ প্রান্তে চরবালিথা নামক স্থানে আরেকটি অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর কারণে এ খালের পানি বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীতে প্রবাহিত হতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে উল্লেখিত এলাকায় মারাত্বক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক প্রাণসায়ের খালের দুই প্রান্তে (চরবাথিলায় এবং খেজুরডাঙ্গায়) অবস্থিত জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো অপসারণের প্রস্তাব করেন।

উল্লেখিত খালদখল ও দূষণমুক্ত করে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে বারবার আবেদন জানান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হতে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন প্রতিকার না পেয়ে অবশেষে এলাকাবাসী খাল রক্ষায় আইনি সহযোগিতা পেতে বেলা’র নিকট আবেদন জানায়। এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বেলা প্রতিনিধি খালটি সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং ঘটনার সত্যতা খুঁজে পায়। দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী খাল দূষণ ও দখলমুক্ত রেখে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা আপনার দায়িত্ব যা পালনে আপনি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর পক্ষে বেলা’র আইনজীবী নোটিশের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাধীন কাটিয়া মৌজার আর এস ২৩৪০ দাগে অবস্থিত প্রাণসায়ের খালের তালিকাভুক্ত ও তালিকা বর্হিভূত (যদি থাকে) অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জোর দাবি জানা গেছে। একইসাথে এ খাল দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানা গেছে। সেইসাথে প্রাণসয়ের খালের দুই প্রান্তে (চরবাথিলায় এবং খেজুরডাঙ্গায়) অবস্থিত জল নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো অপসারণপূর্বক খালের মূল প্রবাহ নিশ্চিত করতেসিএস জরিপ (ক্ষেত্র বিশেষে আরএস) অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক খালের প্রবাহ বিঘ্নকারী সকল অবকাঠামো অপসারণ করে এর যথাযথ সংরক্ষণের অনুরোধ জানাচ্ছে।

এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ প্রেরণের সাত দিনের মধ্যে নোটিশ প্রদানকারিকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এস. হাসানুল বান্না এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও আইনজীবী, বেলা কর্তৃক পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে সাতক্ষীরায় জেলা শহর তথা প্রাণসায়র খালের পরিবেশ দুষণ রোধকল্পে কার্যক্রম গ্রহণ করার লক্ষ্যে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি যৌথ কমিটি গঠন করে পরিপত্র জারি করেছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মঙ্গলবার(১৬ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটি পরিপত্র জারি করেছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল।

যৌথ কমিটির সদস্যরা হলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা’র নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলীকে আহবায়ক এবং সদস্য হিসেবে পৌর স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোঃ রবিউল আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আসমা খাতুন, সাতক্ষীরা থানা’র পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন্স), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ হাসানুর রহমান।

সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কতৃক জারিকৃত পরিপত্রে বর্ণিত কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, ছয় সদস্য বিশিষ্ট যৌথ কমিটি জেলা শহর তথা প্রাণসায়র খালের পরিবেশ দুষণ রোধকল্পে কার্যক্রম মনিটরিং করবে। সাতক্ষীরা পৌরসভার অর্থায়নে যৌথ কমিটি প্রাণসায়র খালের প্রয়োজনীয় স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনপূর্বক নজরদারি কার্যক্রম গ্রহণ করবে। যৌথ কমিটি প্রাণসায়র খালের পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনদের সচেতন করবে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!