খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট

প্রবাহমান চিত্রা নদী ইজারা, ক্ষতির মুখে প্রাণ প্রকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদ, বাগেরহাট

বাগেরহাটে প্রবাহমান চিত্রানদীকে দীর্ঘদিন ধরে বদ্ধ জলাশয় হিসেবে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। ইজারাদার নিজের সুবিধামত নদী ও নদীর শাখা খালগুলো ব্যবহার করছেন। ইজারার শর্তভঙ্গ করে সাব লিজের মাধ্যমে যত্রযত্র নিষিদ্ধ জাল, কুমোড় (গাছের ডালের স্তুপ) ও পাটা দিয়ে মাছ আহরণ করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। যার ফলে জলজ প্রাণি, নদীর আশপাশের প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা মিনি সুন্দরবনের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।

সেই সাথে ইজারাদারের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে প্রবাহমান এই খাল থেকে মাছ আহরণ করতে পারছেন না প্রকৃত জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব কারণে চিত্রা নদীর ইজারা বাতিল করে উন্মুক্ত ঘোষনা করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ফকিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসক বলছেন সরেজমিন তদন্ত করে সাব-লিজ বাতিলসহ জলমহালটি উম্মুক্ত করতে ভুমি মন্ত্রনায়লকে অবহিত করা হবে।

ভূমিমন্ত্রণালয় সূত্রে জানাে গেছে, জেলার ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী ও সদর উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা প্রবাহমান চিত্রানদী। বাংলা বছরের ১৩৯৭ সালে ভুমি জরিপে নদীর ৩২২ একর বদ্ধ ও ১১৭ একর উম্মুক্ত মোট ৪৪০ একর জমি বদ্ধ জলমহাল হিসাবে সায়রাভুক্ত হয়। এরপর থেকে ৪ উপজেলার ৩০টি মৌজায় ৪২৯ একর জমির সম পরিমান নদী, খাল ও জলাশয় সরকারের কাজ থেকে ইজারা নিয়ে মাছ আহরণ করে থাকে স্থানীয় মৎস্য সমিতির লোকজন।

সবশেষ বাংলা ১৪১৮ থেকে ১৪২৯ সন পর্যন্ত চিত্রানদী জলমহল ইজারা নেয় বাগেরহাট সদরের কুলিয়াদাইড় মৎসজীবী সমিতির লিমিটেড। ইজারায় ১৪২৭ সালের জন্য ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯৭৭ টাকা এবং ১৪২৯ সালের জন্য ২ লক্ষ ১১ হাজার ২২১ টাকা সরকারি কোষাগারে দিয়েছেন কুলিয়াদাইড় মৎসজীবী সমিতির লিমিটেড। কিন্তু সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মৃধা ইজারার চুক্তির তোয়াক্কা না করে সাব লিজ দিয়ে নদীতে কুমার ও বাধাজাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করে আসছেন। যার ফলে প্রকৃত জেলে ও স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সেই সাথে পরিবেশের উপরও বিরুপ প্রভাব পড়ছে বলে দাবি পরিবেশকর্মীদের।

এছাড়া, ওই জলমহালের পাশর্ববর্তী খালগুলো দখলের নেওয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ রয়েছে সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে।

ফকিরিহাটের ফলতিতা গ্রামের মিহির বিশ্বাস বলেন, এতবড় একটা নদীর দুইপাশে বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস। ইজারা গ্রহণের ফলে নদীর পাড়ের বাসিন্দারা নিজেদের প্রয়োজনে নদী থেকে একটা মাছও ধরতে পারেন না। এমনকি স্থানীয় প্রকৃত জেলেরাও মাছ ধরতে পারে না। আমরা চাই সরকারি নদী উন্মুক্ত থাকবে যে যার মত ব্যবহার করবে।

রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, নদীর মধ্যে বড় বড় নেট পাটা, কুমোড়, বাঁধাজালসহ নানা ভাবে মাছ আহরণ করা হয়। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়েও মাছ ধরা হয়। কেউ কিছু বলতে পারে না। কারণ সরকার এই নদী ইজারা দিয়েছেন।

ফকিরহাট উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বলেন, নামমাত্র ইজারা নিয়ে যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে প্রবাহমান নদীটি মরতে বসেছে। এতে শতশত জেলেরা মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সাথে স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ইজারা বাতিল করে উম্মুক্ত হলে অসহায় জেলেরা মাছ আহরণ করে এবং কৃষি কাজে সেচ সুধিবা পাবে বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বাগেরহাট জেলার আহবায়ক মোঃ নুর আলম বলেন, প্রবাহমান চিত্রা নদী ব্যবসায়িকভাবে ইজারা দেওয়ার ফলে এই নদীর উপর মানুষের যে অধিকার রয়েছে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া এই চিত্রানদীর দুই পাশে গড়ে ওঠা মিনি সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইজারাদারের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে। চিত্রানদী ঘীরে যে প্রাণ-প্রকৃতি গড়ে উঠেছে সেটা বাঁচাতে হলে, এই নদীর ইজারা বাতিল করে উন্মুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই পরিবেশকর্মী।

সাব লিজ নেওয়ার কথা জেলেরা স্বীকার করে কুলিয়াদাইড় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মৃধা বলেন, বর্তমানে খাজনার টাকা উঠে না। তাই নিয়ম মেনে লীজ দেওয়া হয়েছে। যদি অন্য কারও লাগে সে ইজারা নিতে পারে। কেউ ইজারা নেয় না। তাই আমি ইজারা নিয়েছি।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, প্রবাহমান চিত্রানদী জলমহলের নামে ইজারা নিয়ে শর্তভঙ্গ করে সাব লিজের অভিযোগ আসছে ইজারাদারের বিরুদ্বে। এই অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে সাব-লিজ বাতিলসহ জলমহালটি উম্মুক্ত করতে ভুমি মন্ত্রনায়লকে অবহিত করা হবে বলে জানান ।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!