আমদানি করলে বাজারে চিকন চালের দাম কমে আসতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তবে চাল আমদানিতে প্রধানমন্ত্রীর সায় মিলছে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি। সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার(১০ ফেব্রুয়ারি) ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্নড হ্যামলার্সের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন মন্ত্রী।
কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘চালের দাম বাড়ছে। আমি অবশ্য বলব যে, মোটা চালের দাম বাড়ছে না। ২-১ টাকা কমেছে গত কয়েক দিনে। চিকন চালের দাম বাড়ার দিকে।
‘চিকন চালের দিকে মানুষের ঝোঁক মারাত্মক। সবাই এখন চিকন চাল খেতে চায়। মোটা চাল মানুষ বিক্রি করে দেয় গরুর খাবার, পশুর খাবারের জন্য। এটা একটা সমস্যা। এত খাবার মজুত আছে; প্রায় ২০ লাখ টন। তারপর উৎপাদনও ভালো হয়েছে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তখনই সিন্ডিকেট হয় যখন সাপ্লাই কম হয়। গতকাল নওগাঁ-কুষ্টিয়ায় ফুড কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে, মোটা চালের দাম বাড়ে নাই, কিন্তু চিকন চালের ঘাটতি রয়েছে। এখন আমরা কী করব। আমরা তো সামনে প্রোগ্রাম নিচ্ছি হাইব্রিড আমরা আরও বাড়াব।’
তিনি বলেন, ‘চালের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল তো আমরা হতে পারব না। সরু চালের উৎপাদন কম। আমাকে এমন উৎপাদন করতে হবে যাতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা থাকতে পারি।’
মন্ত্রী বলেন, “কিছু আমদানি করলে নিয়ন্ত্রণ হবেই। প্রধানমন্ত্রী তো করতে দিচ্ছেন না। আমদানি করলে হয়তো দাম কিছুটা কমবে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলছেন, ‘আমি তো ১০ টাকা দরে চাল দিচ্ছি, অতি দরিদ্রদের জন্য। আমি বিজিএফ, ওএমএসে চাল দিচ্ছি। গরিব মানুষের তো কোনো সমস্যা নাই। ধনীরা যারা চাল খেতে চায়, দাম দিয়ে খায়। আমার চাষিদেরও তো দাম পেতে হবে। সরু চালের দামটাই বেশি, মোটা চালের দাম কমতির দিকে। আর এটাই আমাদের লক্ষ্য যাতে গরিব মানুষের কষ্ট না হয়।”
চাল ছাড়া অন্য কৃষিপণ্যের দামও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ কি না জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো উৎপাদন করা। আমি মনে করি না ফুলকপির উৎপাদন কম হয়েছে। সারা পৃথিবীতে করোনার কারণ একটু ইনফ্লেশন হয়েছে। কন্টেইনার ভাড়া আগে যেটা ছিল তার চেয়ে বেড়েছে, এখানে ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে।
‘সার্বিকভাবে অর্থনীতির ওপর বিরাট একটা প্রভাব পড়েছে। সারে আমরা সাবসিডি দিচ্ছি। আগে যেটা ৯ হাজার কোটি ছিল, এখন সেটা দিতে হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। গম আড়াই শ ডলারের ওপরে কখনো প্রতি টনের দাম ছিল না, এটা এখন সাড়ে ৪০০ ডলার। সার্বিকভাবে শিপিং কস্ট বা অন্য পণ্যের দাম যদি কমে না আসে, কৃষিপণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য কঠিন হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। আলুর দাম বেশ কম, তবে শাক-সবজি দাম…মানুষের মুদ্রাস্ফীতির একটি প্রভাব আছে। এ কারণেই সবকিছুর দাম বাড়ার প্রভাব কৃষিপণ্যের উপরেও পড়েছে।’
আইএফএডি কান্ট্রি ডিরেক্টরের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকটাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শাক-সবজি, তেল জাতীয় ফসল সবকিছুর উৎপাদনই বেড়েছে। এই মুহূর্তে একটি প্রোগ্রাম আমরা কোস্টাল এলাকায় করছি। এই কর্মসূচির আওতায় উপকূলে একটা ফসল হয় ধান।
‘জুন-জুলাইয়ে এটা লাগায় আর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে গিয়ে হারভেস্ট করে। আর সারা বছর দেখবেন উপকূলের জমি পতিত পরে থাকে। আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেক স্টাডি করে দেখেছে, এখানে অনেক ফসলের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের ২৫ ভাগ এলাকা উপকূলীয়। আমরা প্লেইন ল্যান্ডে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো উপকূলীয় এলাকা। আমরা এই এলাকার ছোট ছোট চাষিদের মাঝে স্যালাইন রেজিস্ট্যান্ট যে ভ্যারাইটিগুলো করেছি, যেমন: ভুট্টা, তরমুজ বা শাক সবজি, আমরা করছি। আমরা চাচ্ছি কীভাবে এটাকে আরও বাড়ানো যায়। এ ক্ষেত্রে আইএফএডি আমাদের সহযোগিতা করবে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই