প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সোমবার চার দিনের সফরে বেজিং যাচ্ছেন। সফরের তৃতীয় দিন অর্থাৎ বুধবার তিনি বেজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরপর দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু সমঝোতা স্মারকসহ নানা রকমের প্রায় ২০টি দলিল সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এবারে এখন পর্যন্ত এ সফরে দুই দেশের মধ্যে কোন চুক্তি সই হচ্ছেনা বলেই জানা যায়। যা সই হবে তার বড় অংশ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)। এছাড়া বেশ কিছু সম্মত চিঠি বা দলিল সই হবে।
গত শুক্রবার পর্যন্ত দুই দেশ নতুন ও নবায়ন মিলিয়ে অন্তত ১৫ এমওইউ সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতিমালা, ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগে সহায়তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা, ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা জোরদার, চীন–বাংলাদেশ ষষ্ঠ মৈত্রী সেতুর সংস্কার, চীন–বাংলাদেশ ষষ্ঠ মৈত্রী সেতু নির্মাণ, ব্রক্ষ্মপুত্রে পানিপ্রবাহের পূর্বাভাষ, আওয়ামী লীগ ও সিপিসির মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের দুটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা, আম রপ্তানি, সরকারী বেসরকারি অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা। এছাড়াও সহযোগিতার নানা ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চিঠি সইয়ের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এই সফরে যে সব সমঝোতা স্মারক সই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তার অন্যতম ছিল প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের উত্থাপিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই)। এছাড়াও চীন সুনীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি এমওইউ সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। জানা গেছে, এই সফরে জিডিআই ও সুনীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার দুই এমওইউ সই নাও হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যে সব এমওইউ ও দলিল চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে এ দুটি বিষয় ছিল না।
দুই দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যেহেতু আলোচনা হতে যাচ্ছে তাই কোনভাবে জিডিআইতে বাংলাদেশের যুক্ততার ঘোষণা আসতেও পারে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে রিজার্ভে ডলার ঘাটতিসহ অর্থনৈতিক সংকট মেটাতে দেশটির ঋণ সহায়তা। গত ফেব্রুয়ারিতে চীন ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ বাণিজ্য–সহায়তা (ট্রেড ফ্যাসিলিটি) হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। চীনা মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ৬০০ কোটি ইউয়ানের বেশি। পরে বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবের পাশাপাশি বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের ঋণের অনুরোধ জানায়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণ নিয়ে গত জুন মাসে বেজিংয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনাও হয়।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঋণ সহায়তা এখন ৫০০ কোটি ডলারে সীমিত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বাজেট সহায়তার যে ২০০ কোটি ডলারের ঋণের বিষয়ে কথা হয়েছিল তা নিয়ে আর আলোচনা হচ্ছে না। এখন বাংলাদেশকে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলারই দিতে আগ্রহী চীন। তবে ঋণের সুদের হার, ঋণ নেওয়া ও পরিশোধকালীন সময় শুরুর বিরতি এবং সুদ পরিশোধে সময়ের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর চূড়ান্ত সুরাহা এখনো হয়নি। কর্মকর্তা পর্যায়ে বিষয়টির সুরাহা না হলে রাজনৈতিক স্তরে সফরে এর সিদ্ধান্ত হতে পারে।
খুলনা গেজেট/এইচ