স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হওয়া সংসদ সদস্যরা জোটবদ্ধ হয়ে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নেবেন কি না, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। জাতীয় সংসদে তাঁদের ভূমিকা কী হবে—সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তা বা নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকে।
গত তিন দিনে ১৯ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য জানান, তাঁদের বেশির ভাগ সংসদে সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে আগ্রহী নন। তাঁরা আওয়ামী লীগের হয়েই সংসদে থাকতে চান। তবে দু-একজন বলছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দল গঠন করবেন।
গত বুধবার শপথ গ্রহণ করেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যরা। তবে এবার সংসদের প্রধান বিরোধী দল কারা হবে এবং বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁদের আসন ৬২টি। এর মধ্যে চারজন ছাড়া বাকি সবাই হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির পদধারী নেতা, নয়তো সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। স্বতন্ত্ররা মিলে জোটবদ্ধ (গ্রুপ) হলে তারাই হবে প্রধান বিরোধী দল এবং তাঁদের একজন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ বলেন, সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরোধী দলের ভূমিকা নেওয়া নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। বিষয়টি নির্ভর করবে সংসদ নেতা ও স্পিকারের ওপর। শিগগিরই তাঁরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। তার চেয়ে বেশি আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ রয়েছে জাতীয় পার্টির।
প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন মাদারীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম।
জাতীয় সংসদে সরকারের বিরোধিতাকারী দলগুলো বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত। তবে বিরোধী দল হতে হলে ন্যূনতম কতজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে, সেটি আইন বা জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে উল্লেখ নেই। তবে বিরোধী দলের নেতা কে হবেন, তা উল্লেখ আছে।
জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত ক্ষেত্রমতো দল বা অধিসংঘের নেতা।’
এ ছাড়া ‘বিরোধী দলের নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার)’ আইনেও একই সংজ্ঞা দেওয়া আছে।
গত বুধবার শপথ গ্রহণের আগে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করবেন। তাঁরা জোট করবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। তার চেয়ে বেশি আসন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ রয়েছে জাতীয় পার্টির। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা পৃথকভাবে জোট না করলে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হবে।
বিএনপি থেকে বেরিয়ে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে জয়লাভ করেছেন সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। তিনিও জানান, বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে কারও সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়নি। সংসদে তিনিসহ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে একরামুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সেটা সময় বলে দেবে।
জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা সিদ্দিকুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নীলফামারী-৪ আসন থেকে জয়লাভ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সরকারের সঙ্গে থেকেই কাজ করতে চাই।’
কারও সঙ্গে বিরোধী দল গঠনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম।