খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

প্রথমবারের মতো ফেসবুকের সক্রিয় গ্রাহক কমেছে, শেয়ার মূল্যেও পতন

গেজেট ডেস্ক

ফেসবুকের ১৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দৈনিক সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ ত্রৈমাসিকে ফেসবুকেরর সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৯২ কোটি ৯০ লাখ। আগের ত্রৈমাসিকে এই সংখ্যা ছিল ১৯৩ কোটি।

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মসের শেয়ারের দাম গত বুধবার দিনের শেষে ২০ শতাংশের চেয়েও বেশি কমে গেছে। অ্যাপলের ডিভাইসে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নীতিতে পরিবর্তন ও টিকটকের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল পূর্বাভাষ প্রকাশ করে মেটা। এর পরই মূলত শেয়ারের দাম কমে যায়।

মেটা জানিয়েছে, অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার শর্ত পরিবর্তনের কারণে তারা সমস্যায় পড়েছে। এতে করে, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে তাদের সম্ভাব্য গ্রাহকের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে ও এ সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে জটিলতার মুখে পড়ছে। এছাড়াও মেটা সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন সহ অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়ের উল্লেখ করেছে।

মেটা আরও জানায়, তারা টিকটক ও ইউটিউবের কাছ থেকে আরও বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এখন ছোট ছোট ভিডিও ‘রিলের’ দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন, কিন্তু সেগুলো থেকে আয়ের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম। এ কারণে সার্বিকভাবে আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

ফেসবুক বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ২৯১ কোটি মাসিক সচল গ্রাহক দেখিয়েছে। এর আগের প্রান্তিকের সচল গ্রাহকের সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন ছিল না। অর্থাৎ, সচল গ্রাহকের দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি স্থবিরতায় ভুগছে।

শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় মেটার বাজার মূল্য নিমিষেই ২০০ বিলিয়ন ডলার কমে যায় (প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা)। টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট ও পিনটারেস্টের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোও প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্য হারায়।

গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইঙ্কের শেয়ারের দামও ২ শতাংশ কমে যায়। মজার বিষয় হচ্ছে, ২ দিন আগেই প্রতিষ্ঠানটি গত প্রান্তিকে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয়ের ঘোষণা দিয়েছিল।

ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে গুগলের পরই ফেসবুকের অবস্থান।

মেটার প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ডেভ ওয়েনার একটি কনফারেন্স কলে বিশ্লেষকদের জানান, অ্যাপলের গোপনীয়তা শর্ত পরিবর্তনের প্রভাব পুরো ২০২২ জুড়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য হতে পারে।

অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে পরিবর্তন আসার পর এখন আইফোন, আইপ্যাড ও অন্যান্য অ্যাপল ডিভাইসের ব্যবহারকারীরা অ্যাপগুলোকে তাদের অনলাইন কার্যক্রম বিশ্লেষণ থেকে বিরত রাখতে পারবেন। ভোক্তার পছন্দ ও অনলাইন কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণের জন্য ডিভাইস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রাসঙ্গিক বিজ্ঞাপন দেখায় সামাজিক মাধ্যমগুলো। অ্যাপল তার প্রাইভেসি পলিসিতে এই পরিবর্তনের কারণে বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য সঠিক তথ্য সংগ্রহ অনেক ঝামেলাপূর্ণ হয়ে গেছে। এটি এমন কি নতুন পণ্য তৈরি ও বাজার সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে।

মেটা প্রথম প্রান্তিকের রাজস্ব পূর্বাভাষ দেখিয়েছে ২৭ বিলিয়ন থেকে ২৯ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। তথ্য পর্যালোচনাকারী সংস্থা রিফাইনিটিভ এর দেওয়া আইবিইএস (ইনস্টিটিউশনাল ব্রোকার্স এস্টিমেট সিস্টেম) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্লেষকরা ৩০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের প্রত্যাশা করছিলেন।

বিশ্লেষক ডেব্রা আহো উইলিয়ামসন জানান, নিশ্চিতভাবেই মেটার জন্য সামনে আরও বড় বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, বিশেষ করে বিজ্ঞাপন থেকে পাওয়া রাজস্বের ক্ষেত্রে।

সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, টিকটকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেমে পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে, জানান ডেব্রা।

রিফাইনিটিভের তথ্য অনুযায়ী, মেটার রাজস্ব চতুর্থ প্রান্তিকে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে, যেটি ১ বছর আগে ২৮ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ছিল। বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন মূলত বিজ্ঞাপন থেকে আসা এই রাজস্বের পরিমাণ হবে ৩৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ আয়ের ঘোষণা দেওয়ার সময় বলেন, ‘আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি, যেমন রিলস, কমার্স ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, যেটি খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা ২০২২ এ এসব খাতে এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখব এবং মেটাভার্স তৈরির কাজ আগাতে থাকবো।’

পৃথিবীর অন্যতম প্রধান প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান ফেসবুক মেটাভার্সের প্রতি তাদের অঙ্গীকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২০২১ এর অক্টোবরে নাম পরিবর্তন করে ‘মেটা’ করে। তাদের মতে, মেটাভার্সই হবে মোবাইল ইন্টারনেটের উত্তরসূরি।

তবে এই নাম পরিবর্তন শুধু তাদের মূল প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ কোনো পরিবর্তন আসেনি।

মেটার রিব্র্যান্ডিং প্রক্রিয়া এখনো চলছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রতিযোগীদের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে ক্ষতিকর ও বিভ্রান্তিকর কন্টেন্টের দুর্বল ব্যবস্থাপনার অভিযোগ এসেছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মেটা বা, ফেসবুকের নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির দিন আর নেই।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!