অনেক জল্পনা কল্পনার পর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ আজ। দুদলের প্রথম দ্বিপাক্ষিক টি২০ সিরিজ। আগের চারটি ম্যাচের সব ছিল বিশ্বকাপে। এই সিরিজও দুদলের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ। টি ২০-তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়শূন্য বাংলাদেশ এগিয়ে থেকেই এই সিরিজ খেলতে নামছে। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। দুদলই সিরিজটিকে টি ২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে নিয়েছে।
ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, প্যাট কামিন্স, অ্যারন ফিঞ্চের মতো ক্রিকেটাররা নেই এই সফরে। মূল দলের অনেকে না থাকায় অন্যদের সামনে সুযোগ পারফর্ম করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অস্ট্রেলিয়া ৪-১-এ টি ২০ সিরিজ হেরে এসেছে। সফরে কয়েকজন তরুণ ভালো করেছেন। বাংলাদেশেরও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২-১-এ টি ২০ সিরিজ জয়ে তরুণদের অবদান রয়েছে।
বাংলাদেশেরও টপঅর্ডারে প্রথম তিন ব্যাটসম্যান নেই। ইনজুরি ও বায়ো-বাবলের কারণে তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমকে ছাড়া খেলতে হবে। প্রথম দু-একটি ম্যাচে খেলতে পারবেন না দলের সেরা বোলার মোস্তাফিজুর রহমান। সেরা চার ক্রিকেটার ছাড়াও সম্ভাবনা দেখছেন মাহমুদউল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করি টি ২০ সংস্কারণ এমন র্যাংকিংয়ের যত উপরের দলই হোক না কেন, নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেললে যে কাউকে হারানো যায়। ওদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ক্রিকেটার আসেনি। একইভাবে আমারাও গুরুত্বপূর্ণ কিছু খেলোয়াড় মিস করছি। তবে আমাদের দলের জন্য এটা বড় সুযোগ। দেশের মাটিতে আমরা ভালো দল। আমরা চেষ্টা করব যেন আরও একবার সেটা প্রমাণ করতে পারি।’ অস্ট্রেলিয়ার বোলিং ইউনিট শক্তিশালী। মিচেল স্টার্ক ও জস হ্যাজলউডের সঙ্গে রয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা ও অ্যাস্টন অ্যাগার। মিরপুরের উইকেট মন্থর। বল ব্যাটে আসে ধীরে। নিচু বাউন্স কখনো অসমান। রানের খেলা টি ২০-তেও মিরপুরে প্রায়ই রান করতে ধুঁকতে হয় ব্যাটসম্যানদের।
টাইগার টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তিন তরুণ নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন ও শামীম পাটোয়ারীর প্রশংসা করেছেন। তাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে রিয়াদ প্রশংসাসূচক বাক্য ব্যয় করেছেন প্রচুর। অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই সোহান, আফিফ, শামীমদের গেম শেষ করার সামর্থ্য আছে। ওরা ভালো ছন্দে আছে। আমি তাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছি।’
অধিনায়কের আশা, ‘ইনশাআল্লাহ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজেও তারা তাদের প্রতিভা ও স্কিলের প্রতি সুবিচার করতে পারবে।’
রিয়াদ জানিয়েছেন জিম্বাবুয়ের সাথে সিরিজের মত হয়ত এ সিরিজেও তাকে একটু ওপরে মানে চার-পাঁচ এ ব্যাট করতে দেখা যাবে। ‘জিম্বাবুয়ে সফরে ওপরের দিকে ব্যাটিং করেছি। এই সিরিজেও হয়তোবা ওপরের দিকে ব্যাটিং করতে হতে পারে। চেষ্টা করব যেন দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পারি।’
এদিকে দারুণ এক মাইলফলকের সামনে সাকিব আল হাসান। আর মাত্র পাঁচ উইকেট নিলেই বিশ্বের দ্বিতীয় বোলার হিসাবে আন্তর্জাতিক টি ২০-তে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বোলার হিসাবে ৫০ উইকেটের মাইলফলক থেকে স্টার্ক দুটি ও জাম্পা তিন উইকেট পেছনে।
পাঁচ ম্যাচের সিরিজ বাংলাদেশ যে কোনো ব্যবধানে জিততে পারলে শ্রীলংকাকে টপকে র্যাংকিংয়ে নয়ে উঠে যাবে। সিরিজ জয়ের তাড়নার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ানদের দৃষ্টি আছে বিশ্বকাপেও। অসি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমরা প্রত্যাশিত ফল পাইনি। এই সিরিজ জিততে চাই। এটা একটা সুযোগ সবাইকে দেখার যে বিভিন্ন ভূমিকায় তারা কেমন করছে, যাতে বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের সময় বোঝা যায় কোন ভূমিকায় কে কেমন করবে।’
অভিজ্ঞ-পরীক্ষিত ওপেনার তামিম ইকবাল-লিটন দাস নেই, নেই মুশফিকুর রহিমের মতো ব্যাটিং স্তম্ভ। এসব বাস্তবতা মেনেই একাদশ সাজাতে হবে টিম ম্যানেজম্যান্টকে।
অজিদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে মোহাম্মদ নাঈম-সৌম্য সরকারকে। তিনে সাকিব আল হাসান। চারে নামতে পারেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসার। পাঁচে নুরুর হাসান সোহান তার পরে দেখা যেতে পারে আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
বল হাতে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে মোস্তাফিজুর রহমানকে। চোটমুক্ত হয়ে দ্য ফিজ অনুশীলনেও ছিলেন দুর্দান্ত। তার সঙ্গে দেখা যেতে পারে শরিফুল ইসলামকে। এ ছাড়া আছেন সাইফউদ্দিনও। স্পিনে দেখা যেতে পারে নাসুম আহমেদকে। আর সাকিবতো আছেনই। প্রয়োজনে হাত ঘোরাতে পারেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহও।
১ আগস্ট জিম্বাবুয়ে থেকে দেশে ফিরে এসে বায়োবাবলে প্রবেশ করা ১৭ জনকে রেখে দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এই দলে আছেন পেসার রুবেল হোসেন। আছেন স্পিনার তাইজুল ইসলামও।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে এসে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াইয়ে নামছে লাল সবুজের বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বুধবার (৪ আগস্ট)। একদিন বিরতি দিয়ে তৃতীয়টি হবে শুক্রবার (৬ আগস্ট)। পরদিন (৭ আগস্ট) হবে চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে সোমবার (৯ আগস্ট) হবে পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টি। সবগুলো ম্যাচ হবে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। আর ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়।
সম্ভাব্য একাদশ: সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক),নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, সাইফউদ্দিন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।