নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার মধ্যরাতে। আগামীকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে এখন উত্তাপ চলছে নারায়ণগঞ্জ শহর এলাকা জুড়ে। নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া তৈমুর আলম খন্দকার।
এ নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেদের মতো করে কৌশলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ভোটারদের মন জয়ে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে জয়ের বিষয়ে দুই প্রার্থীই আশাবাদী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ও সহিংসতা এড়াতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
প্রচারণার শেষ দিনে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে পথসভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি নৌকা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের মানুষের মনের কথা আমার নেতারা বুঝেছেন। এই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, জনগণের ঘাঁটি। আমার বাবা আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিলেন। তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। আমি দীর্ঘদিন আপনাদের জন্য কাজ করেছি।
আইভী বলেন, যখন শহরে কেউ ছিল না তখন নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ২০১১ সালে নির্বাচন করেছি। আপনারা লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী করেছিলেন। ২০১৬ সালেও আপনারা একই কাজ করেছিলেন। এ নৌকা আইভীর নৌকা, বিজয়ের নৌকা, বঙ্গবন্ধুর নৌকা। এই নৌকাকে হারানোর ক্ষমতা কারও নেই।
তিনি আরও বলেন, বিগত পাঁচ বছরে নারায়ণগঞ্জের আনাচে-কানাচে উন্নয়ন হয়েছে। আপনারা নিশ্চই এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরে দেখেছি। মাটি ও মানুষ বলছে নৌকা নৌকা। আমি নারায়ণগঞ্জবাসীকে অনুরোধ করব- আমাকে পাঁচ বছরের জন্য সুযোগ দেন। যে কোনো সময় অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। আমি আপনাদের জন্য মৃত্যুকেও বরণ করতে রাজি আছি। আমি ঘর-সংসারের দিকে তাকাইনি। আশা করি আপনারা আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।
অপরদিকে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরের মাসদাইরে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোর সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিকেলেও ভোটের প্রচারে গিয়ে এ অভিযোগ করেছিলেন তৈমুর।
সংবাদ সম্মেলনে তৈমুর আলম বলেন, ‘বিভিন্ন স্কুল থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, ভোটকেন্দ্রগুলোর সিসিটিভি তুলে নেওয়ার জন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা দিয়ে কী বোঝায় সেটা আপনারা বুঝে নেবেন। আমি মনে করি ভোট চুরি, নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা অথবা পুলিশি নির্যাতনের জন্যই সিসি ক্যামেরাগুলো তুলে নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চালু রাখার অনুরোধ জানান তিনি। তাঁর নির্বাচনী এজেন্টের উপস্থিতিতেই যেন ইভিএমে ভোটের কার্যক্রম চালানো হয়, সেই দাবি জানিয়েছেন তৈমুর আলম খন্দকার।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রগুলোতে একজন করে ইভিএম অপারেটর দেওয়া হবে। আমাদের এজেন্ট ছাড়া সেই অপারেটর যেন ইভিএম মেশিনে কোনো কাজ না করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের এজেন্ট যেন নিরাপদে কেন্দ্রে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থাও নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে।’
ইভিএমে ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের প্রিন্ট তাঁর এজেন্টদের হাতে দেওয়ারও দাবি জানান তৈমুর।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগতরা অবস্থান করছেন দাবি করে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, নারায়ণগঞ্জের অঞ্চলগুলোকে ভাগ করে বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন সাংসদের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বহিরাগত এনে সেসব এলাকার কেন্দ্রগুলোকে নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। বহিরাগতরা বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে থাকছেন। নির্বাচনের দিন যেন বহিরাগতরা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘১৯২টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্সের ২৭টি টিম, পুলিশের ৬৪টি মোবাইল টিম, ২০ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৬টি চেকপোস্ট, ৭টি টহল টিম ও ২টি স্ট্র্যাট্রিক টিমসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজার সদস্য নিয়োজিত থাকবে।’
এবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডে ৭ জন মেয়র প্রার্থী, ১৪৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৪৩ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিসিলর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জন ভোটার। মোট ভোটকেন্দ্র ১৯২টি। মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ১৩৩৩টি। অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯৫টি।