ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব। সুন্দরবনের দুবলার চরে সোমবার (৩০ নভেম্বর) ভোর ৬টায় শুরু হওয়া পূণ্যস্নান শেষ হয় সকাল ৭টায়। হাজার হাজার পূণ্যার্থীর সাগররের লোনা পানিতে স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হল এবারের রাস পূজা। স্নানের পরপরই সকলেই আবার ফিরতে শুরু করেছেন নিজ গন্তব্যে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাগরের নোনা জলে স্নান করছেন। জোয়ারের লোনা পানিতে স্নান করলে তাদের পাপ মোচন হবে এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন তারা। স্নান করার সময় অনেকে বিভিন্ন, গাছ, পাতা সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দেন। মুহুর্মুহু উলুধ্বনি আর মোমবাতি জ্বালিয়ে আরাধনা করেন। করোনার কারণে পূণ্যর্থীরা মুখে মাস্ক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করছেন। অন্যবার রাস মেলা থাকায় প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ আসলেও এবার মেলা বন্ধ থাকায় প্রায় ১৫ হাজার লোক সমাগম হয়েছে রাস উৎসবে।
খুলনার কয়রা থেকে আসা পূন্যার্থী তাপন পাল বলেন, রাস উৎসবে এসে লোনা পানিতে স্নান করলে অতীতের সব পাপ মোচন হয়। এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে এসে পূণ্যস্নান করেছি। অতীতের সব পাপ মোচন হয়ে গেছে। আগামীতে আমি ভালো হয়ে চলবো। আমি কিছু মানত করেছি আশা করি তা পূরণ হবে।
এর আগে রোববার (২৯ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাস উৎসব।
করোনা পরিস্থিতিতে এবার রাস পূজায় কোন মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মালম্বীরা রাস পূর্নিমার পূজা ও পূণ্যস্নানে অংশগ্রহন করতে পেরেছেন। ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দূবলার চরে রাস পূজা ও ৩০ নভেম্বর সকালে দূবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পূণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের রাস উৎসব শেষ হলো। শুধুমাত্র পূণ্যার্থীদের আগমনে রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিকতার কোন কমতি ছিল না সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসে (খ্রিস্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পূণ্যস্নানের জন্য দুবলার চর বিখ্যাত। যদিও বলা হয়ে থাকে, ২০০ বছর ধরে এ রাসমেলা হয়ে চলেছে।, তবে জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত, নাম হরিভজন (১৮২৯—১৯২৩), এই মেলা চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পূণ্যার্থী রাসপূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। দুবলার চরে সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউবা আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ।
আবার কারো কারো মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।
খুলনা গেজেট/কেএম