খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা
সম্পাদক পরিষদ, ডিআরইউ ও টিআইবির পৃথক বিবৃতি

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে উদ্বেগ, দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা 

গেজেট ডেস্ক

সম্প্রতি দেশের সাবেক ও বর্তমান উচ্চ ও নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বিবৃতিটি পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

রবিবার (২৩ জুন) পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বিবৃতির বিপক্ষে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে, সম্পাদক পরিষদ, টিআইবি ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।

 স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকি : সম্পাদক পরিষদ

পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ সাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপির শেষাংশে অনুরোধ জানানো হয়েছে জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে।

ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্যও সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হয়।

সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশের ভালো কাজের মূল্যায়ন প্রতিবেদন আকারে গণমাধ্যম প্রচার করে থাকে। আবার সরকারের দায়িত্বশীলপদে কর্মরত থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন, যা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়— এমন তথ্য অনুসন্ধান করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে তা প্রকাশের কাজটিও করে গণমাধ্যম। এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পাদক পরিষদ মনে করে, সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে ঢালাও প্রতিবাদলিপির মাধ্যমে পারস্পারিক দোষারোপ চর্চার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিবাদের মাধ্যমে দেওয়া পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার প্রতি অশোভন, অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যারা এসব খবর প্রকাশ করেছেন তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে সংশয় থাকলে নিয়ম ও বিধি অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রেস কাউন্সিলের দারস্থ হওয়া যেতে পারে। তা না করে প্রতিবাদের মাধ্যমে পারস্পারিক দোষারোপ ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে যেকোনো ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকরত সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধের নামে গণমাধ্যমকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা চর্চার পরিপন্থী বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে গণমাধ্যমকর্মীদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি উৎসাহিত হবে: ডিআরইউ

সাংবাদিকদের নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।

সংগঠনটি বলেছে, সম্প্রতি পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কয়েক কর্মকর্তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কোনো কোনো মহল ও সংগঠন যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী।

ডিআরইউর সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী ও সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন আজ রোববার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন। তাঁরা আরও বলেন, দেশের কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তার অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হওয়ার সংবাদ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন না। সাংবাদিকেরা সব সময় দায়িত্বশীল এবং তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করে থাকেন।

ডিআরইউর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব তথ্যই গণমাধ্যমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাংবাদিকদের বড় কাজটি হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ পরিবেশন করা। সাংবাদিকেরা অনুসন্ধান করে তথ্য–উপাত্ত বের করে থাকেন এবং পেশাদারির সঙ্গে তা প্রকাশ করেন।

ইতিমধ্যে কিছু তথ্যভিত্তিক খবর বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রকাশিত হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এসব সংবাদ কারও বিপক্ষে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে যাঁদের নামে সাংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের কাজ হচ্ছে প্রকাশিত তথ্যগুলো সঠিক কি না, তা প্রমাণ করা। কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি করে থাকলে এটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদমাধ্যমকে দোষারোপ করা শোভন কাজ নয়; বরং এর মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিগত দুর্নীতি উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ করা যৌক্তিক নয়।

দেশের স্বার্থে সাংবাদিক-পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করে আসছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী দিনেও একই সঙ্গে কাজ করবেন সাংবাদিক ও পুলিশ। বাধাবিপত্তির মুখেও সাংবাদিক সমাজ তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাবেন বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়—এমন বক্তব্য প্রদান থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় ডিআরইউ। তারা বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানেই স্বীকৃত।

দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার অপচেষ্টা : টিআইবি

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সংবিধান পরিপন্থী হুমকি উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিষয়টিকে সাম্প্রতিক সময়ে ফাঁস হওয়া সাবেক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী একাংশের দুর্নীতির সুরক্ষা প্রদানের অপচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া সাবেক পুলিশ কর্তাদের নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিকে উটপাখির আচরণসম উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে দেওয়া বিবৃতিটিই পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠনের এমন বিবৃতি যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের সুরক্ষা প্রদানের একটি সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া-এমন মনে হওয়া মোটেও অমূলক নয়।

দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সংগঠনের এ বিবৃতি একদিকে যেমন সংবিধান স্বীকৃত স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি সরাসরি হুমকি ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা, অন্যদিকে তেমনি নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিতের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মূলত বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে “উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে” রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে- এমন মন্তব্য করা মোটেই অত্যুক্তি হবে না।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির খবরে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে- পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এমন বক্তব্যকে বালখিল্যতার সামিল উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্তাদের দুর্নীতির যে বিশাল, অস্বাভাবিক ও অনেকাংশে উৎকট খতিয়ান আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারছি, সে সকল সংবাদকে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার খোঁড়া যুক্তিতে থামানোর চেষ্টা করা পুলিশের মতো একটি দায়িত্বশীল সংস্থার ভাবমূর্তি সুরক্ষায় নিজেদের সক্ষমতা ও সৎসাহস নিয়ে প্রশ্ন জন্ম দেয়। এমন স্বার্থের দ্বন্দ্বে দুষ্ট যুক্তির বদলে বিপুল দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ জানা যাচ্ছে, তার জন্য বিব্রতবোধ করে স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের তরফ থেকে নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত তদন্তে সহায়তার ঘোষণা দিলে তা বাহিনীর দুর্নীতি প্রতিরোধের সদিচ্ছার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতো। তা একদিকে যেমন পুলিশের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক হতো, অন্যদিকে পুলিশের প্রত্যাশিত পেশাগত মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতো।’

খুলনা গেজেট/এ এইচ/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!