কক্সবাজারে এক টমটম চালকের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন এক কিশোরীর বাবা। সেই টাকা দিতে না পারায় কিশোরীকে তুলে নিয়ে দেড় মাস আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন সেই টমটমচালক ও তাঁর তিন সহযোগী। দেড় মাস পর সেই কিশোরীকে উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম র্যাব-৭-এর সদস্যরা। গ্রেপ্তার করেছে টমটমচালক মোঃ শাহাব উদ্দিন ও তাঁর তিন সহযোগীকে। তাদের কক্সবাজার মডেল থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
কক্সবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুনীর-উল-গীয়াস জানিয়েছেন, কিশোরীকে উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হল- সদর উপজেলার খরুলিয়া চেয়ারম্যানপাড়ার মো. শাহাব উদ্দিন (২৮), তাঁর সহযোগী খুরুসকুল হাটখোলাপাড়ার মো. নুরুল আলম (৩৮) ও পেঁচারঘোনার লোকমান হাকিম (৩৪) ও পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আরমান হোসেন (২৭)।
কিশোরীর মা জানান, তাঁর স্বামী টমটম চালান। খরুলিয়া চেয়ারম্যানপাড়ার শাহাব উদ্দিনের টমটম চালাতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক হয়। সেই সুবাদে শাহাব উদ্দিন তাঁদের বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। এরমধ্যে তাঁর স্বামীর টাকার প্রয়োজন পড়ায় তিনি টমটম চালক শাহাব উদ্দিনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ধার নেন। টানাপোড়েনের সংসারে তাঁর স্বামী সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এই সুযোগে শাহাব উদ্দিন ও তাঁর লোকজন তাঁদের কিশোরী মেয়েকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। টাকা ফেরত না দিলে মেয়েকে আর ফেরত দেবেন না বলে শাহাব উদ্দিন জানিয়ে দেন।
তাঁরা মেয়েকে উদ্ধারের জন্য খরুলিয়ার ইউপি সদস্য আবদুর রশিদের কাছে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেন। তাতেও মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মেয়েকে উদ্ধারের জন্য সরকারি সহায়তা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে আকুতি জানান মা। ৯৯৯ থেকে বিষয়টি কক্সবাজার মডেল থানাকে অবগত করা হলে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনসুরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কিশোরীকে উদ্ধারের জন্য গত ১১ অক্টোবর খরুলিয়া চেয়ারম্যানপাড়ায় টমটমচালক শাহাব উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানের খবর আগে থেকে জেনে যাওয়ায় শাহাব উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের লোকজন ওই মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যান।
খরুলিয়ার ইউপি সদস্য আবদুর রশিদ জানান, টমটম চালক শাহাব উদ্দিন এর আগেও নারী সংক্রান্ত ঘটনা ঘটিয়েছেন।
পরে চট্টগ্রামের র্যাব-৭-এর একটি দল গতকাল অভিযান চালিয়ে শাহাব উদ্দিন ও তাঁর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এরপর বৃহস্পিতবার দিবাগত মধ্যরাতে তাঁদের কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করে।
সদর থানার ওসি জানান, আটককৃতদের শুক্রবার সকালে আদালতে সোপর্দ করার পর জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিকটিমের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
এদিকে র্যাব জানায়, কিছুদিন আগে ভিকটিমের মা র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এ অভিযোগ করেন যে, গত ১ সেপ্টেম্বর শাহাব উদ্দিন ও তাঁর সহযোগী মিলে তাঁর ছোট মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে প্রায় দেড় মাস যাবত অজানা স্থানে আটকে রেখে ধর্ষণ করছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৭ ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে র্যাব-৭ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে উক্ত ধর্ষণকারী ও তাঁর সহযোগীরা কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে টানা ৩৬ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে ভিকটিমকে উদ্ধার এবং প্রধান আসামি মো. শাহাব উদ্দিন ও তাঁর অপর তিন সহযোগীকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
র্যাব আরো জানায়, আসামিরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করায় তাদের আটকের কাজটি ছিল কষ্টসাধ্য। একপর্যায়ে র্যাব-৭ জানতে পারে আসামিরা কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন কস্তুরা ঘাট এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাত ৮টায় র্যাব-৭-এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা প্রধান আসামি শাহাব উদ্দিনকে আটক করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর তিন আসামি আরমান হোসেন, মো. নুরুল আলম ও লোকমান হাকিমকে খরুসকুল থেকে আটক করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। পরে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শাহাব উদ্দিন অপর তিন আসামিকে নিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।
খুলনা গেজেট/এআইএন