বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের দেড় দশকে ব্যাংকিং খাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও লাগামহীন দুর্নীতি করে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার শুরুর দিকেই। যার পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সূচকের অবস্থান এতোটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
ফখরুল বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারে না, হতদরিদ্র মানুষ পেট ভরে দু’বেলা খেতে পারে না, অন্যদিকে আওয়ামী স্বৈরশাসকেরা উন্নয়নের গালগল্প করে দেশটাকে ঋণের জালে জর্জরিত করে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকার সর্বগ্রাসী দুর্নীতি করছে।
আর ঋণ করে ঘি খাওয়ার পরিণতিতে দেশ এখন প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের চাকায় পিষ্ট। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, ভ্রান্তনীতি গ্রহণ, নীতির সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, সর্বোপরি লাগামহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ সংকট থেকে বের হতে পারছে না।
দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে নিমজ্জিত দেশের ব্যাংকিং সেক্টর উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই আমাদের অর্থনীতি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। মূলত সরকারের পলিসিগত বা রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং ব্যক্তিস্বার্থ বা সর্বগ্রাসী লুটপাট আমাদের অর্থনীতির জীবনী শক্তিকে ক্রমেই ধ্বংস করে দিচ্ছে।
অর্থনীতি এখন নজিরবিহীন মন্থরগতিতে চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কাঁচামাল এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। অর্থাৎ বিনিয়োগ কমছে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমছে। আমদানি নির্ভর অর্থনীতির জন্য এ এক মহা চ্যালেঞ্জ। তার উপর রয়েছে স্বার্থান্বেষীদের সিন্ডিকেট। মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছে। অনেকের সঞ্চয়ও শেষ। নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাসতো আছেই।
মির্জা আলমগীর বলেন, আর্থিক খাতসহ দেশে আইনের শাসন ও সার্বিক শৃঙ্খলার অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে জবাবদিহিতা। যেহেতু বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই, তাদের হাতে আমাদের এই দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, বিচার ব্যবস্থা কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। তাই দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহ্বান, আসুন বাংলাদেশে একটি সত্যিকার জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং দুঃসহ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের অবসান ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করি। তাহলেই ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যাংকিং সেক্টর তথা সামগ্রিক অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করে টেকসই উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
খুলনা গেজেট/এনএম