বন্যার পানি যে পথ দিয়ে নামবে অর্থাৎ বাংলাদেশের গোমতী, ফেনী, খোয়াই, মাতামুহুরীসহ বেশির ভাগ নদ–নদী দুই যুগে ভরাট ও দখল হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হিসাবে শুধু কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এলাকায় এ ধরনের দখলদারের সংখ্যা ১১ হাজার ৪৪৭। চট্টগ্রাম বিভাগ ধরে হিসাব করলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার। নদী–খাল ও জলাভূমি দখলের কারণে বন্যার পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে।
নদী রক্ষা কমিশন থেকে সারা দেশের দখলদারদের একটি তালিকা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ করা হয়। এদের বড় অংশ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মী ও প্রভাবশালী মহল। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোর মধ্যে কুমিল্লায় প্রায় ৬ হাজার, ফেনীতে ২৭৭, নোয়াখালীতে ৪ হাজার ৩০৩ ও লক্ষ্মীপুরে ১ হাজার ৪১ জন দখলদার রয়েছে।
রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘উজান থেকে আসা পানির ঢল সম্পর্কে ভারতের কাছ থেকে আমাদের সঠিক তথ্য পাওয়া যেমন দরকার, তেমনি ওই ঢল আসার পর তা নামার পথও মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত যৌথ নদী কমিশন ও নদী রক্ষা কমিশন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রতিষ্ঠাগুলোকে সক্ষম ও কার্যকর করে গড়ে তোলার।
নদী ও পানিবিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত সার্বিক বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্যা ও আবহাওয়া পূর্বাভাস–ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। যে ধরনের পূর্বাভাস আমরা যেভাবে দিই, তাতে চলমান বন্যার মতো ভয়াবহ দুর্যোগের বিষয়টি আগাম বোঝা যায় না। আর ভারতের কাছ থেকে আমরা গঙ্গা ও তিস্তার পানিপ্রবাহের তথ্য যত বিস্তারিত পাই। গোমতী ও মুহুরীর মতো অন্য নদীগুলোর ঢল বা পানিপ্রবাহের তথ্য সেভাবে পাই না।’
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত আরও বলেন, এই বন্যার একটি কারণ হিসেবে ভারতের ত্রিপুরার ডম্বুর বাঁধের গেট খুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পানি বেড়ে গেলে গোমতী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই স্লুইসগেট স্বয়ংক্রিয়ভাবেই খুলে যায়। পানি কমলে তা আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।