খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

পানাহারের শিষ্টাচার ও আহারপূর্ব করণীয় (পর্বঃ ২১)

হাফেজ মাওলানা মুফতি জুবায়ের হাসান

মুসলিম ব্যক্তি খাদ্য ও পানীয়কে অন্যান্য উপকরণের মতই মনে করে এবং তাকে আসলেই সে (জীবনের) চূড়ান্ত উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য মনে করে না; সুতরাং সে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্যেই খায় ও পান করে, যার দ্বারা সে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে সক্ষম হয়; ঐ ইবাদত তাকে পরকালের সম্মান ও সৌভাগ্য অর্জনের জন্য যোগ্য করে তুলে; সুতরাং সে শুধু খাদ্য ও পানীয়ের মজা উপভোগ করার জন্য পানাহার করে না। তাই সে ক্ষুধার্ত না হলে খায় না এবং পিপাসার্ত না হলে পান করে না। এক হাদিসে সাহাবীদের বক্তব্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে: “আমরা এমন এক জাতি— ক্ষুধা না লাগলে আমরা খাই না; আর যখন আমরা খাই, তখন পেট ভরে খাই না।

আর সেখান থেকে মুসলিম ব্যক্তি তার খাবার ও পানীয়ের ব্যাপারে কতগুলো শরী‘য়ত সম্মত বিশেষ আদব রক্ষা করাকে নিজ দায়িত্বরূপে গ্রহণ করে; যেমন—

১. হালাল ও পবিত্র জিনিস থেকে তার খাবার ও পানীয়কে পছন্দ করবে, যা হারাম ও সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُلُوا مِن طَيِّبٰتِ مَا رَزَقْنٰكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে আমরা যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা থেকে খাও। -সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৭২
আর পবিত্র মানে হালাল বস্তু, যা ময়লাযুক্ত, দূষিত ও অপবিত্র নয়।

২. খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার দ্বারা নিয়ত থাকবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার জন্য শক্তি অর্জন করা; যাতে সে যা খায় বা পান করে, তার জন্য সে সাওয়াব পেতে পারে; কেননা, অনেক সময় ভালো নিয়তের কারণে ‘মুবাহ’ (বৈধ) বিষয় আনুগত্যে পরিণত হয়, ফলে মুমিন ব্যক্তিকে তার জন্য সাওয়াব দেয়া হয়।

৩. খাওয়ার আগে দুই হাত ধৌত করা, যদি তাতে ময়লা থাকে অথবা হাত দু’টির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়।

৪. যমীনের উপর কোনো পাত্রে খাবার রাখা, টেবিলের উপর নয়; কেননা, এটা বিনয়-নম্রতার একেবারেই কাছাকাছি পন্থা। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
عَنْ أَنَسٍ قَالَ مَا عَلِمْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَكَلَ عَلٰى سُكْرُجَةٍ قَطُّ وَلاَ خُبِزَ لَه“ مُرَقَّقٌ قَطُّ وَلاَ أَكَلَ عَلٰى خِوَانٍ قَطُّ قِيلَ لِقَتَادَةَ فَعَلاَمَ كَانُوا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلٰى السُّفَرِ.
নবী করীম ﷺ কখনও ‘সুক্‌রুজা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন, তার জন্য কখনও নরম রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের উপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না। ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তাঁরা কিসের উপর আহার করতেন। তিনি বললেনঃ দস্তরখানের উপর।
-সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৫৩৮৬

৫. বিনয়ীভাবে দুই হাঁটু গেড়ে দুই পায়ের পাতার উপরে বসা, অথবা ডান পা দাঁড় করিয়ে দিয়ে বাম পায়ের উপরে বসা, যেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বসতেন; তাছাড়া নবী ﷺ বলেন: “আমি হেলান দিয়ে খাইনা। আমি তো গোলাম; আমি খাই, যেমনিভাবে গোলামে খায়; আর আমি বসি, যেমনিভাবে গোলামে বসে। -সহীহ বুখারী, ৫৩৯৮

৬. প্রস্তুত করা বিদ্যমান খাদ্যে সন্তুষ্ট থাকা এবং খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা; যদি তার কাছে ভালো লাগে খাবে, আর ভালো না লাগলে বর্জন করবে; কেননা, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ مَا عَابَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم طَعَامًا قَطُّ إِنْ اشْتَهَاه“ أَكَلَه“ وَإِنْ كَرِهَه“ تَرَكَهُ
“রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনও খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতেন না; তাঁর রুচিসম্মত হলে খেতেন; আর রুচিসম্মত না হলে খেতেন না। -সহীহ বুখারী ৫৪০৯

৭. একাকি না খেয়ে কোনো মেহমান, পরিবার, সন্তান, অথবা খাদেমকে সাথে নিয়ে খাওয়া; কেননা, হাদিসে এসেছে, নবী ﷺ বলেন: “তোমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদের খাবার খাও এবং আল্লাহর নামে খাও, দেখবে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে। -সুনানে আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৩৭৬৬

আল্লাহ তায়ালা আমল করার তাওফিক দান করুন।

ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ,
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!