বর্তমান সময়ে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় তালা এলাকার অধিকাংশ কৃষক ঝুকছেন পান চাষে। অন্যান্য কাচাঁ ফসল বাদ দিয়ে পান চাষ ১২মাসি লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন ফিরে পাচ্ছে স্বচ্ছলতা। কৃষি ফসলের মধ্যে পুরাতন ফসল পান। তবে পান চাষ কবে, কোথায়, কখন, কিভাবে উৎপত্তি তার কোন সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পান চাষীরা জানায়, বাপ-ঠাকুর দা পানচাষ করেছে তাই আমরা পান চাষ করি। দেশে এমন কোন এলাকা নেই যেখানে পানের বেচাকেনা নেই।
এক সময় শুধু বারুই সম্প্রদায়ের লোকেরা পান চাষ ও এ ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বর্তমানে অন্য সম্প্রদায়ের কৃষক পানচাষে বেশী অগ্রহী হয়ে উঠেছে। সারা দেশের তুলনায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে বহু বছর ধরে ঐতিহ্যগতভাবে সামাজিক রীতি, আচার-আচরণের অংশ হিসেবেই পানের ব্যবহার চলে আসছে। এক সময় বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে পান ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাচীন অভিজাত জনগোষ্ঠীর মাঝে পান তৈরি এবং তা সুন্দরভাবে পান দানিতে সাজানো লোকজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি ছিলো।
পান চাষী নিত্য নন্দী,ফয়সাল হোসেন সহ অনেকে জানান, পান চাষের জন্য যেমন বিশেষ ধরনের জমির প্রয়োাজন তেমনি প্রচুর যত্নেরও দরকার হয়। পানচাষের জন্য নির্বাচিত জমি সাধারণত একটু উঁচু, মাটির ধরন শক্ত এবং জলাশয় ও পুকুর ইত্যাদির ধারে হওয়া ভালো। পানের বাগানকে বলা হয় বরজ এবং একটি বরজের আয়োতন সাধারণত ১২থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকলেও এখন অনেক বেশি জমিতে পানচাষ হচ্ছে।
বরজে সরিষার খৈল ও গোবরকে সার হিসেবে ব্যবহার কর হয় এবং বর্তমানে প্রচলিত জৈব সারের সাথে রাসায়নিক সারও ব্যবহৃত হচ্ছে। চাষের উপযোগী করে জমিকে তৈরি করার পর মে ও জুন মাসে পানের লতা রোপণ করা হয়। মাঝখানে দুই ফুট দূরত্ব রেখে চারাগুলি সমান্তারাল লাইনে রোপণ করে ,বাঁশের শলা বা খুঁটি পুঁতে তার সাথে পানের লতাগুলি জুডিয়ে দে
য়া হয়।
গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বরজের চারদিকে ৫/৬ ফুট উঁচু করে বাঁশের শলা ও খুঁটি দিয়ে বেড়া এবং একই সামগ্রী দিয়ে উপরে মাচান তৈরি করা হয়। শুকনা মৌসুমে পান গাছে নিয়মিত পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। চারা রোপণের এক বছর পর পান আহরণের উপযোগী হয় এবং বরজ তৈরির পর কয়েক বছর পর্যন্ত তা থেকে উৎপাদন অব্যাহত থাকে।
সাধারণত বছরে পানের তিনটি ফলন হয়। তবে সাধারণত কার্তিক, ফাল্গুন এবং আষাঢ মাসে পান আহরণ করা হয়। বলা হয়ে থাকে কার্তিকের পান আষাঢের পানের চেয়ে সুস্বাদু। পান গাছে কমপক্ষে ষোলটি পান রেখে বাকি পান পাতা আহরণের নিয়ম। পাতার আকার, কোমলতা, ঝাঁজ, সুগন্ধ ইত্যাদির বিচারে বহু ধরনের পান রয়েছে। যেমন- মিষ্টি পান, (মিঠা) পান, সাঁচি পান প্রভৃতি। পান সাধারণত ২০ গুন্টায় এক পন ধরা হয়, সাধারণত ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০টাকা পর্যন্ত পানের পণ বিক্রি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিদা খানম জানান, তালা উপজেলায় ৪২৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামীতে আরও বেশি জমিতে পান চাষ হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় পানচাষ বৃদ্ধির কারণে, প্রতিদিন এই উপজেলা থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম রাজশাহী, সহ দেশের বিভিন্ন বিভাগে পান সরবরাহ করা হয়। তবে অন্যঅন্য ফসল বিক্রয়ের হাট দিনের বেলা হলেও পান বিক্রির হাট বসে গভীর রাতে । সূর্য উঠার আগেই পানের বেঁচা-কেনা শেষ হয়।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন