খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি পাটকলের শ্রমিকদের এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার বেশি চূড়ান্ত পাওনা রয়েছে। এসব পাটকলের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত ও বদলী শ্রমিকদের প্রায় সাত ধরনের পাওনা পরিশোধ করা হবে। খুলনা জোনের পাটকলগুলোর অবসায়নকৃত ১০ হাজার ৩৬৪ জন শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ১ হাজার ১৬২ কোটি ৩১ লাখ টাকা, অবসরপ্রাপ্ত ৪ হাজার ৬৮০ জন শ্রমিকের ৩৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং বদলী ২১ হাজার ৩৫১ জন শ্রমিকের ১১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া বকেয়া মজুরি বাবদ ২৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিজেএমসির কর্মকর্তারা।
বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, পাটকল শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ), গ্র্যাচুইটি, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ সমুদয় পাওনার ৫০ শতাংশ নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হবে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বিজেএমসির হাতে পৌঁছেছে। একই সাথে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর করিম জুট মিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। আর আগামী সোমবার বিজেএমসির খুলনা জোনের সাতটি পাটকলের শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকসহ প্রায় সাত ধরনের পাওনা পরিশোধে অনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। এদিন বেলা ১২ টায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান প্রধান অতিথি থেকে প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকদের মাঝে পাওনা পরিশোধের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
বিজেএমসির সূত্রটি জানায়, খুলনা জোনের সাতটি পাটকলের ৩৬ হাজার ৩৯৫ জন অবসরপ্রাপ্ত, অবসায়নকৃত ও বদলী শ্রমিকদের গ্রাইচ্যুটি, গোল্ডেন হ্যান্ডশেক, পিএফ, মজুরি কমিশনের বকেয়া, মৃত্যুদাবী, ছুটি নগদায়ন ও বকেয়া মজুরি বাবদ পাওনা রয়েছে ১ হাজার ৬৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এসব খাতের মধ্যে বদলী শ্রমিকদের শুধুমাত্র মজুরি কমিশনের বকেয়া অর্থ প্রদান করা হবে। পাটকলগুলোর মধ্যে আলীম জুট মিলের ১ হাজার ৭৪৪ জন শ্রমিকের ১০৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, কার্পেটিং জুট মিলের ১ হাজার ১১৪ জনের ৬৭ কোটি ২ লাখ টাকা, ক্রিসেন্ট জুট মিলের ১১ হাজার ১৯ জনের ৪৬৩ কোটি ৪ লাখ টাকা, ইস্টার্ণ জুট মিলের ২ হাজার ৬৭২ জনের ১৩২ কোটি ৪১ লাখ টাকা, জেজেআই জুট মিলের ৩ হাজার ৪৫২ জনের ১৭১ কোটি ৩ লাখ টাকা, প্লাটিনাম জুট মিলের ১০ হাজার ১০১ জনের ৪৫৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং স্টার জুট মিলের ৬ হাজার ২৯৩ জন শ্রমিকের ২৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ গোলাম রব্বানী জানান, অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিক হিসাবে ১৬৭৭ কোটি টাকা পাওনার হিসাব করা হয়েছে। তবে শ্রমিকদের নির্ভূলভাবে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। সেই কারণে দফায় দফায় হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। ফলে বর্তমান হিসাবের কিছুটা থেকে অর্থ কম-বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন, আগামী রবিবার পাওনা পরিশোধের প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে পরবর্তীতে আগামী ১৯ অক্টোবর সোমবার প্লাটিনাম জুট মিলের ৩০ জন শ্রমিককে পাওনা প্রদানের মধ্যদিয়ে খুলনা জোনের পাটকল শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে প্লাটিনাম জুবলী জুট মিলের অবসরপ্রাপ্ত ও অবসানকৃত মোট ৩ হাজার ৮৩৬ জন স্থায়ী শ্রমিকের পাওনা অর্থ প্রদান করা হবে। এছাড়া বদলী শ্রমিকদেরও মজুরি কমিশনের অর্থ প্রদান করা হবে। এর আগে খুলনা জোনের পাটকলগুলোর শ্রমিকদের নোটিশ মেয়াদের, অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের ৬০ দিনের মজুরি প্রদান করা হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, লোকসান থেকে বাঁচতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৪ হাজার ৮৮৬ স্থায়ী শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের (স্বেচ্ছা অবসরে) মাধ্যমে অবসরে পাঠানো হচ্ছে বলে গত ২৮ জুন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী। ১ জুলাই থেকে বিজেএমসির ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে সভার পর গত ২ জুলাই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বন্ধ ঘোষণা করা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রতি শ্রমিক গড়ে ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫৪ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন। সরকার তাদের পাওনার অর্ধেক নগদে পরিশোধ ও বাকি অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র দেবে। পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও পুনর্বিন্যাস করে বিজেএমসির বন্ধ মিলগুলো জরুরি ভিত্তিতে ফের চালু করা হবে। এজন্য মিলগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি), যৌথ উদ্যোগ জিটুজি বা লিজ মডেলে পরিচালনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আবার উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
খুলনা গেজেট / এমএম