খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
চলাচলের একমাত্র রাস্তা যেন স্থানীয়দের জন্য অভিশাপ

পাইকগাছায় ৬ কি:মি: কাঁচা রাস্তার হাঁটু কাঁদায় জনদূর্ভোগ চরমে

পাইকগাছা প্রতিনিধি

সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের উত্তর গড়ের আবাদ গ্রামের প্রায় ৬ কি:মি: কাঁচা (মাটির) রাস্তাটি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এক পসলা বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাঁদায় ব্যাহত হয় চলাচল। পাশের নৈর নদীর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা রাস্তার কোথাও কোথাও মিশেছে নদীতে। দু’ শতাধিক পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস সেখানে। যার মধ্যে মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ১৭ টি গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারের বসতিও রয়েছে সেখানে। ২টি মহিলা মাদ্রাসার পাশাপাশি গ্রামটিতে রয়েছে ৪টি মসজিদ। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও দূর্গম জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকার সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তার এহেন বেহালদশায় অজানা অভিশাপ বয়ে বেড়াচ্ছেন বলে মনে করেন তারা।

সড়কের চৌমুহনী বাজার থেকে খুলনার পাইকগাছা-কয়রা প্রধান সড়কের গজালিয়া পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ কিলোমিটার। বর্ষা মৌসুমে রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত পানিতে অনেকেই জাল পেতে মাছ ধরেন। কোন কোন এলাকা ধ্বসে পড়েছে প্রবাহমান নৈর নদীতে। স্থানীয় চিরচেনাদের ছাড়া বহিরাগতদের আকষ্মিক দেখে বোঝার উপায় নেই মূল রাস্তাটা কোন দিকে? আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির অবাধ অগ্রগতির যুগে টিজিটালাইজড বাংলাদেশের উন্নয়নের মহা সোপানে দাঁড়িয়ে এখানকার মানুষের সরকারের কাছে প্রত্যাশা পীচঢালা বা কংক্রিট নয়, এক খন্ড ইটের সোলিং রাস্তা হলেই চলবে তাদের।

ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, যেকোন প্রয়োজনে উপজেলা সদর থেকে শুরু করে অসুস্থ্যতায় রোগী সাধারণকে বাইরে নিতে কিংবা গ্রামের বাইরে ছেলে-মেয়েদের স্কুল কলেজে যাতায়াত করতে সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হয়।

মহামারি করোনা কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে গোটা পৃথিবী যখন স্তব্ধ ঠিক তখনো থেমে নেই বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকা। সারা পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ যখন রোল মডেল তখন পাইকগাছার অবহেলিত জনপদের এমন করুণ চিত্র সত্যিই অভাবনীয়।

স্থানীয়রা জানান, ৬ কি:মি: রাস্তার মধ্যে ইতোপূর্বে স্থনীয় ইউপি সদস্য আ: রশিদ সরদার, কামরুল ইসলাম সরদার ও আক্কাজ ঢালী মেম্বর থাকাকালীণ খন্ড খন্ড করে অপরিকল্পিতভাবে এক থেকে দেড় কি:মি: এলাকা ইটের সোলিংয়ের কাজ করান। ইতোমধ্যে সেসব এলাকারও ইট উঠে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় জনৈক রাজ্জাক সরদার বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধিরা কয়েক দফায় বাদুড়িয়া ব্রীজ হতে চৌমুহনী বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কি:মি: এলাকায় যেটুকু ইটের সোলিং বাস্তবায়ন করেছে তার মধ্যেও ৩/৪ খন্ড মাটির রাস্তা দৃশ্যমান পড়ে রয়েছে। যা পথচারীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে দ্বিগুণ।

গ্রামের জনৈক মুজিবর সরদার নামের একজন বলেন, সারা দেশের উন্নয়নের সাথে তাদের অবস্থার বিস্তর ফারাক। এখনকার সময়েও তাদের মাটির রাস্তায় হাঁটু কাঁদা মেড়ে পথ চলতে হয় তাদের। গ্রাম হবে শহর শ্লোগানকে সামনে রেখে সারা দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও তাদের অবস্থা ভিন্ন। এজন্য তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতাকেই দায়ী করেন।

স্থানীয় আরেক ব্যক্তি জয়নাল সরদার বলেন, তাদের গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতেই ব্যাটারী চালিত অটো ভ্যান, মোটর সাইকেল, ইজিবাইক, নসিমন-করিমন রয়েছে। এসব বাহনের চার্জ কিংবা নিরাপত্তায় বাড়িতে নেয়া জরুরী হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশায় তা পলিথিনে ঢেকে অরক্ষিত অবস্থায় অন্য গ্রামে রেখে বাড়ি ফিরতে হয়। এক্ষেত্রে কোন কোন সময় চুরির ঘটনাও ঘটে।

মাত্র এক খন্ড রাস্তার অভাবে অধিকাংশ পরিবারের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ করেন কেউ কেউ।

সরেজমিনে দেখা যায়, অবহেলিত কাঁচা রাস্তার উত্তর গড়ের আবাদের বিল্লাল সানার বাড়ির সামনে রাস্তা নিঁচু থাকায় বর্ষায় রাস্তা উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসময় সেখানে জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য রীতিমত চোখে পড়ার মত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল সরদার বলেন, উত্তর গড়ের আবাদের জরাজীর্ণ চলাচল অনুপযোগী রাস্তার উন্নয়নে ইউপি চেয়ারম্যাকে বারংবার বলেও কার্যত কোন কাজ হয়নি। রাস্তার গোলজার মোল্লা বাড়ী থেকে বাদুড়ি ব্রীজ পর্যন্ত মাটির রাস্তাটুকু ইটের সোলিং করতে তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

এব্যাপারে চাঁদখালী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাদা আবু ইলিয়াস’র সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে না পাওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ অবহেলিত জনপদের বঞ্চিত মানুষের প্রাণের দাবি, পিচ কিংবা কংক্রিট নয়, সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তাটুকু ইটের সোলিং বাস্তবায়ন করা হোক। এব্যাপারে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!