পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে করা পৃথক দুই মামলায় আরও ৩৬ জনের সাজা হয়েছে। দণ্ডিতদের বেশির ভাগ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী। এঁদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান অন্যতম।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত মামলা দুটির রায় দেন। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে ৯৭ মামলায় ১ হাজার ৫৩২ জনের সাজা হলো।
এ ছাড়া ২০১৩ সালে পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে সূত্রাপুর থানার একটি মামলার রায়ে গতকাল ২৪ আসামির সবাই খালাস পেয়েছেন। মামলাটির রায় দেন ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম।
গতকাল যে দুটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর একটি ২০১১ ও অপরটি ২০১৮ সালে রমনা থানায় দায়ের করা হয়। একটি মামলার বাদী পুলিশ, অন্যটির বাদী একজন গাড়িচালক। রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিতরা কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেছেন।
এর মধ্যে ২০১১ সালে করা মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পৌঁছায় যাত্রীবাহী একটি বাস। তখন জামায়াতের ২০০ থেকে ২৫০ জন নেতা-কর্মী গাড়িটি ভাঙচুর ও মারধর করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। মামলাটির বাদী বাসচালক মনু মিয়া।
পুলিশ এ মামলায় ২০ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় পাঁচজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। এঁদের মধ্যে তিনজন সাধারণ মানুষ ও দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
গতকাল মামলাটির রায় দেন ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন। রায়ে ২০ জনের প্রত্যেককে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অপর মামলাটি হয় ২০১৮ সালের আগস্টে। এটির বাদী পুলিশ। মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুজন শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা যান। এ দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে। ওই বছরের ৫ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর পরিবাগে পদচারী-সেতুর নিচে শিক্ষার্থীরা সাত থেকে আটটি গাড়ি ভাঙচুর করছিল। তাদের হাতে ছিল লাঠি ও রড। পুলিশ বাধা দিলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে বেআইনি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি রাজীব আহসানসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ৪১ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় ২০২০ সালের ৮ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২২ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় ২৪ ডিসেম্বর। ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫ জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এঁদের মধ্যে চারজন পুলিশ সদস্য।