খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু
পরিস্থিতি আরও খারাপের শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

পাঁচ দিনে দেশে মৃত্যু ৬ শতাধিক, শনাক্ত ২৫ শতাংশের উপরে

গেজেট ডেস্ক

গত পাঁচ দিনে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসেবে মারা গেছে ৬০৬ জন। আর নতুন রোগি হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৪১ হাজার ৬৩৬ জন। গড় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে আগামী কিছুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখনও আসেনি বলেই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারা বলছেন, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এখন সংক্রমণ এবং মৃত্যুর যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, সেটি আসলে তিন সপ্তাহ আগের অবস্থার বর্তমান পরিণতি।

চলমান লকডাউন শুরুর হওয়ার আগে সপ্তাহখানেক ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে গেছে, তার প্রভাব কী হতে পারে সেটি দেখার জন্য আরও তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। মি. ফয়সাল বলেন, “আমরা খুব সৌভাগ্যবান হবো যদি দেখি যে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।”

সংক্রামক রোগ বিষয়ক সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীরও বলছেন একই কথা। অতীতে প্রবণতা এবং বর্তমান পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মি. আলমগীর ধারণা করছেন যে চলতি সংক্রমণের সর্বোচ্চ চূড়ার দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। “আমার মনে হচ্ছে না এখনও পিক (সর্বোচ্চ চূড়া) এসেছে। পরিস্থিতি দিন-দিন খারাপ হচ্ছে,” বলেন তিনি।

গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একদল গবেষক বলেছিলেন যে জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিক বা সর্বোচ্চ চূড়া আসতে পারে।

বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ-এর আওতায় এই গবেষণা করেছেন একদল গবেষক, যারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনসোর্টিয়ামের অংশ হিসেবে তা করেন। কমো মডেলিং গ্রুপে পিক বা সর্বোচ্চ চূড়া বলতে দিনে অন্তত ১০/১২ হাজার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়াকে বোঝানো হয়।

আইইডিসিআর বলছে, বাংলাদেশে ৩০টি’র বেশি জেলায় শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি। আর ২০টির বেশি জেলায় সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশ কিংবা তার চেয়েও বেশি।

মি. আলমগীর বলেন, ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে সংক্রমণের হার আবারও বাড়তে শুরু করেছে এবং এই প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। “যেসব জায়গায় সংক্রমণ এরই মধ্যে অনেক বেশি হয়েছে, সেখানে হয়তো তা কমতে শুরু করবে। আবার নতুন নতুন জায়গায় সংক্রমণের হার বাড়তে থাকবে,” বলেন এই গবেষক।

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর নতুন করে ৮ হাজার ৪৮৩ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তের হার ২৮.২৭ শতাংশ।

গতকাল কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪৩ জন, যেটি এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে আজকে পর্যন্ত করোনাভাইরাসে পরপর ছয় দিন একশো’র বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন খুলনায় ৩৫ জন। এরপরই ঢাকায় ৩০, রাজশাহীতে ২৪ এবং চট্টগ্রামে ২৪ জন মারা গেছেন।

এর আগের দিনেও সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল খুলনায় (৪৬ জন)। এরপরই মৃত্যুর দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল ঢাকা (৩৫ জন), রাজশাহী ১৯ (জন) এবং চট্টগ্রাম (১৫ জন)।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩০ হাজার ১২ জনের। শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮.২৭ শতাংশ। আগের দিন ৩২ হাজার ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ২৫.৯০ শতাংশ।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত পাঁচদিনে কোভিড রোগী শনাক্তের মোট সংখ্যা ৪১ হাজার ৬৩৬।

গত পাঁচ দিন যাবত দেখা যাচ্ছে, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড রোগী শনাক্তের হার গড়ে ২৫ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ প্রতি চারজনের মধ্যে একজন আক্রান্ত। তবে উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর কোথায়ও কোথায়ও শনাক্তের হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে।

বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, গ্রামের দিকে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে এবং ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে না পারলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।

আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আংশকা প্রকাশ করেন, লকডাউনের আগে বিপুল সংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ার কারণে গ্রামাঞ্চলে সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে।

মি. আলমগীর বলেন, “গ্রামাঞ্চলে তো স্বাস্থ্যবিধি বলতে কিছু নাই, এটাই বাস্তবতা।” তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জাতীয়ভাবে শনাক্তের হার বাড়তে বাড়তে গড়ে ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং এই হার বেড়ে হয়তো ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটাই স্বাভাবিক যে আক্রান্তের সংখ্যা যত বেশি হবে মৃত্যুর সংখ্যা ততই বাড়তে থাকবে। “এখন যারা মারা যাচ্ছেন তারা তখনকার, যখন প্রতিদিন ছয়-সাত হাজার করে রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিন আট হাজারের উপরে পেশেন্ট হচ্ছে। এই মৃত্যুটা আপনি কিছুদিন পরে দেখবেন,” বলেন মি. আলমগীর।

“আজকে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অবস্থা জটিল আকার ধারণ করতে সাত থেকে দশ দিন লাগে। এরপর তারা হাসপাতালে যাবেন। দেখা যাচ্ছে, আক্রান্ত হবার দুই-থেকে তিন সপ্তাহ পরে মৃত্যু হচ্ছে।”

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচদিনে যে ৪১ হাজার ৬৩৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে, এর মধ্যে দুই থেকে তিন শতাংশের মধ্যে যদি রোগ জটিল আকার ধারণ করে, তাহলে প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। “সবকিছু মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল উদ্বেগজনক অবস্থা,” বলেন মি. আলমগীর।

বাংলাদেশে এখন সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বলে সরকারের একটি গবেষণায় জানা গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। চলমান লকডাউন সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সংক্রমণের উচ্চমাত্রা কমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!