কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল দলের রাজ্য সদর দপ্তর তৃণমূল ভবনে গিয়েছিলাম একটি সাংবাদিক সম্মেলনে। বরাবরই একটু আগে-ভাগে যাই। তারপর দেখলাম কলকাতার ই এম বাইপাসের ধারে যেখানে অফিস তৃণমূলের সেখানে তৃণমূলের বেশ কিছু অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সমর্থক নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গে কোনো দলই এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বিজেপি তাবড় তাবড় তৃণমূল নেতাদের বিজেপিতে আনলেও বিজেপি নিজেও স্বয়ং সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ওদের গর্জন যত বেশি, বর্ষণ ততখানি নয়।
ঐদিনই তৃণমূল ভবনের কাছেই তৃণমূলের প্রধান রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের কিছু লোকজন নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে বলছেন, বাম-কংগ্রেস জোট কিন্তু ধীর গতিতে হলেও কিছুটা এগোচ্ছে। এতো গেল পূর্ব কলকাতার ই এম বাইপাসের ধারে তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনের এই ধরনের ফিসফিসানি। এবার চলুন কলকাতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র অফিসপাড়া হিসাবে খ্যাত সেই বিবাদী বাগ এলাকার চালচিত্রটা কী, একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে।ওখানকার পদ্দারকোর্টে সরস্বতী পুজোর এক গেট টুগেদারের অনুষ্ঠানে গেছি। পুরানো কিছু আদি বিজেপির নেতা বলছেন, বিজেপিতে আর পুরানোদের ঠাঁই নেই, নতুনরা আসছেন, ভালো পদ পেয়ে জেড প্লাস নিরাপত্তা পাচ্ছেন। আর পুরানোরা বিজেপি দলে ব্রাত্য।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পশ্চিমবঙ্গের গদি মিডিয়া যেভাবে চাউর করছে তাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন যে,পশ্চিমবঙ্গে কেবল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির বলতে তৃণমূল ও বিজেপি।বাম-কংগ্রেসের কিছুই নেই। বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার আসন সংখ্যা ২৯৪। তৃণমূলের দখলে ২১৩। বাম-কংগ্রেসের দখলে ৭৬। দলবদলের ফলে সেটা কিছুটা কমে গিয়েছে। আবার তৃণমূলের দখলে থাকা ২১৩ আসনের মধ্যে অন্তত ৩০ বিধায়ক এখন বিজেপি শিবিরে। এই ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ও মার্চের প্রথম দিকে অন্তত আরো ২০ বিধায়ক বিজেপিতে ভিড়বে। কিছু মন্ত্রী ও সাংসদও ভিড়বে। এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এটাও বাস্তব, পয়সার জোরে বিজেপি এই দল বদলের ঘটনা ঘটাতে পারলেও পশ্চিমবঙ্গের ৭৮ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার বুথে বিজেপি এজেন্ট দিতে পারবে না। আর এই ভোটকেন্দ্রগুলি মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম এলাকায়। তাই বিজেপি যত গর্জনই করুক, কিংবা ২০০ আসন পাওয়ার হামবড়াই যতই দেখাক না কেন, বিজেপির ভাগ্যে ৭০-৮০ র বেশি আসন জুটবে না বলে রাজনৈতিক পর্যবক্ষেকরা মনে করছেন।
আবার একথাও নিঃসংশয়ে বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল আর কিন্তু ২১৩ আসন পাবে না। তৃণমূল যেভাবে ক্ষয় হয়েছে সেখানে বড়জোর ১০০ থেকে ১২০। কেন না তৃণমূলের যে ভিত্তি ছিল মুসলিম ভোট তা অনেকটাই বেরিয়ে যাবে বাম-কংগ্রেস ও আব্বাস সিদ্দিকীর মহাজোটে। এই জোট ধীর গতিতে অগ্রসর হলেও এই মহাজোট অনেক অঙ্ককে পাল্টে দেবে। আস্তে আস্তে এই মহাজোট ১০০- র কাছাকাছি আসন ছিনিয়ে নেবে বলে রাজনৈতিক পর্যবক্ষেকরা মনে করছেন। তৃণমূল সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পালনে ব্যর্থ। সাচার কমিটির সুপারিশ পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ। চাকুরির হাল বাম জমানায় ছিল চার শতাংশের কিছু বেশি। সেটা কমে হয়ে এক শতাংশের সামান্য কিছু বেশি। নানান কারণে সংখ্যালঘুদের মন তৃণমূল বিমুখ করেছে। তাই বাম-কংগ্রেস-আই এস এফ মহাজোট এই ভোটে থাবা বসাবেই। তাই সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবার কি ত্রিশঙ্কুর দিকে এগোচ্ছে? সেটা সময়ই বলে দেবে।
খুলনা গেজেট/এনএম