বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত শহরের একটি আদালত একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার কলকাতার নিকটবর্তী বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিহাদ হাওলাদারকে, যিনি পেশায় একজন কসাই। শুক্রবার সকালের দিকে তাকে বারাসাত আদালতে হাজির করে ১৪ দিন রিমান্ডের আবেদন করেন সিআইডির কর্মকর্তারা। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
শুক্রবার সকালে আদালতে হাজির করার পর জিহাদকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। তবে তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সরাসরি আদালতে ঢুকে যান। এ সময় তার মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল।
সিআইডি সূত্রের খবর, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ জানিয়েছিলেন, আনোয়ারুল আজিমকে খুনের পর তার দেহাংশ পাশের জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের একটি জায়গায় ফেলা হয়েছিল। তারপর বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে ভাঙড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে কোনো দেহাংশ মেলেনি। মূলত দেহাংশ উদ্ধার এবং হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই জিহাদকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন বলে আবেদনে উল্লেখ করেছে সিআইডি।
রিমান্ড আবেদনে সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, গোয়েন্দারা এখনও নিহত সাংসদের কোনও দেহাংশ খুঁজে পাননি। ফলে গ্রেপ্তারদের জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তার ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এ ক্ষেত্রে, অভিযুক্তেরা কোনও ভাবে তদন্তকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেই সূত্রেই জিহাদকে ১৪ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
সিআইডি সূত্রে খবর, হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। শিলাস্তি রহমান নামের এক নারীকে সামনে রেখে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল, নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার নিউ টাউনের ওই আবাসনে। তার পর সেখানে আনোয়ারুল আজিমকে খুন করা হয়। গ্রেপ্তার জিহাদের বিরুদ্ধে খুনের জন্য অপহরণ, তথ্য নষ্ট করা, ভুল তথ্য দেওয়া, খুন এবং অপরাধের চক্রান্ত করার ধারা যোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
এই ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সেই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডির একটি দল বৃহস্পতিবার ঢাকা এসেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা জিহাদ হওলাদার অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে থাকতেন। খুনের অন্তত ২ মাস আগে তাকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল।
জেরার মুশে জিহাগ স্বীকার করেছেন, প্রথমে আনোয়ারুল আজীমকে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয়। তার পর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তেরা। যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
সূত্র : বিবিসি, আনন্দবাজার
খুলনা গেজেট/এএজে