খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  হত্যাচেষ্টা মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার জামিন
  ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন, জরুরি অবতরণ
  নুসরাতকে কারাগারে পাঠানো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করছে : এনসিপি
  চলতি মাসেই গার্মেন্টস কর্মীদের বোনাস, জুনের শুরুতে দিতে হবে বেতন : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উৎখাত ও পদত্যাগ চাইলো ১৩ গণসংগঠন
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ

পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থান ও পরিবহন রাজস্বে প্রভাব পড়বে, বলছেন কর্মকর্তারা

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

ভারত স্থলপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে সেসব পণ্যে, যা বাংলাদেশ বেশি রপ্তানি করে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থান ও পরিবহন রাজস্বে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতির চেয়ে জাতীয় স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণ করে রোববার এসব কথা বলেন কর্মকর্তারা।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শনিবার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাতে কয়েকটি দিক রয়েছে- প্রথমত, ভারতের কোনো স্থলবন্দর ব্যবহার করেই দেশটিতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না। তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়েও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, আসবাব, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও সুতার উপজাত ইত্যাদি রপ্তানি করা যাবে না। চতুর্থত, ভারত বাংলাদেশের মাছ, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি), ভোজ্যতেল ও ভাঙা পাথর আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। পাশাপাশি ভারতের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হবে না।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (পিসিএএসডব্লিউএ) সদস্য কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ভারত তৃতীয় দেশের ট্রান্সশিপমেন্ট নিষিদ্ধ করার পরেও প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০টি প্রিমিয়াম পোশাক বহনকারী ট্রাক আসত। শনিবারের আদেশের ফলে এই স্থলবন্দর দিয়ে এই ধরনের পরিবহন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। আগে যখন ট্রান্সশিপমেন্ট ছিল- তখন ৬০ থেকে ৮০ ট্রাক পোশাকভর্তি ট্রাক প্রবেশ করত।

তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সীমান্তে লজিস্টিক হাবগুলিতে ট্রাকচালক এবং শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকগুলো প্রায়ই কম দামে আধুনিক ভারতীয় খুচরা চেইনে প্রবেশ করে। এই পণ্যগুলি কার্যকরভাবে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা বাজার দখল করছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ কৌশলগত হতে পারে। সম্ভবত, এটি জাতীয় স্বার্থ এবং সাম্প্রতিকর ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কও অন্তর্ভুক্ত। এখানে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতির চেয়ে জাতীয় স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে ভারতের গণমাধ্যমগুলো দেশটির সরকারের সিদ্ধান্তকে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবেই দেখাচ্ছে। এনডিটিভির শনিবারের প্রতিবেদনে সরকারের এক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। সেটার পাল্টা হিসেবেই নতুন বিধিনিষেধ আরোপ।

ভারত গত এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থলপথে ভারত থেকে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল।

ব্যবসায় কেমন প্রভাব পড়বে
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি। পাশাপাশি ছিলো বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব সামগ্রী।

আবার আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য।

অন্যদিকে গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে, যা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় পেয়েছিলো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছিলো।

এছাড়া সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতেও বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। এই রাজ্যগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছিলেন।

এখন ভারতের নতুন বিধিনিষেধে এর দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। কারণ তৈরি পোশাক স্থল বন্দরের পরিবর্তে সমুদ্র বন্দর দিয়ে পাঠাতে হলে খরচ ও সময় দুটি বেশি লাগবে। সূত্র: বিবিসি ও এনডিটিভি

খুলনা গেজেট/এমএনএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!