সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য এপ্রিল অবধি ভারতে পালাতক ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতার সাথে দলের খুলনা জেলার সহ-সভাপতি এড. এমএম মুজিবর রহমান যোগাযোগ রাখতেন। টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও জুম এ্যাপসের মাধ্যমে পলাতকদের সাথে তিনি নিয়মিত কথা বলতেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গেল শুক্রবার দেশব্যাপি দলের পক্ষ থেকে মিছিলের জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলের খুলনা জেলা ও নগর শাখার সকল স্তরের নেতাকর্মী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে অবস্থান নেয়। সবশেষে নগর শাখার সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা গ্রাম থেকে নিরাপদে সীমান্ত অতিক্রম করেন। সেপ্টেম্বর থেকে জেলার শাখার সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ ও জেলা শাখার সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা শয্যাশায়ী। তাদের অবস্থান আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কোন সংস্থায় নিশ্চিত করতে পারেনি।
কেএমপির গোয়েন্দা সংস্থা গ্রেপ্তারকৃত আওয়ামী লীগ নেতার ৪ মাসের তৎপরতার উপর এমন প্রতিবেদন সদরদপ্তরে পাঠিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত আইনজীবী সমিতির দলীয় সমর্থকদের তিনি সাহস যোগাতেন। ৪ আগস্টের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার নেতৃত্বেই আসামি পক্ষের আইনজীবী মনোনিত করা হয়। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের জন্য আওয়ামী আইনজীবী সমিতির প্যানেল চুড়ান্ত করতে তিনি ভূমিকা রাখেন। অনিবার্য কারণবশত সেই নির্বাচন স্থগিত হয়।
সূত্র বলেছে, সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত ‘আমি একাত্তর বলছি’, ‘আওয়ামী ফাউন্ডেশন’, ‘খুলনা জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ শাখা’ ভূয়া আইডি খোলেন। কর্ম দিবসে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত আইন পেশার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় মোবাইলে গোপন আলাপ থেকে বিরত থাকতেন। গত সাড়ে ৭ মাসে তিনি সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, সেখ সালাউদ্দীন জুয়েল, শেখ সোহেল, সাবেক সংসদ সদস্য এসএম কামাল হোসেন, খুলনা চেম্বারের সাবেক সভাপতি কাজি আমিনুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল, তেরখাদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, দলের খালিশপুর থানা সভাপতি একেএম সানাউল্লাহ নান্নু, আশরাফুল ইসলামসহ মোট ৩০ জনের কাছে খুলনার বিভিন্ন ধরনের তথ্য সরবরাহ করেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য তথ্য হচ্ছে, ৫ ফেব্রুয়ারি শেরে বাংলা রোডের শেখ বাড়ি ভেকু ও বুল্ডোজার দিয়ে আঘাত হানা, এনসিপির নবাগত নেতৃত্ব, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতা ইত্যাদি।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রমতে, গত ২০ এপ্রিল নগরীর জিরোপয়েন্টে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঝটিকা মিছিলের জন্য বটিয়াঘাটা, কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া থেকে দলীয় কর্মী আনার ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারকৃত নেতাই যোগাযোগ করতেন। স্বল্প পরিসরের একটি তহবিলও গড়ে তোলেন। তার উপর নির্দেশনা ছিল জেলা, নগর ও উপজেলা দলকে সংগঠিত করা, মামলায় আইনী সহায়তা দেওয়া, দক্ষিণ জনপদে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, শেখ হাসিনাকে পূনরায় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা তৈরি করা।
৭১ বছর বয়সে গ্রেপ্তারকৃত এই নেতা খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি থাকার সুবাদে জেলা পর্যায়ে তার অনুসারীদের তিনি সংগঠিত করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ গত ৬ মাস তার নির্দেশনা মেনে চলতেন। বুধবার কেএমপি তাকে গ্রেপ্তার করে কোর্ট-হাজতে পাঠায়।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর বিধান চন্দ্র রায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতির জন্য বুধবার জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন।
তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ে মামলার অনুমতি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএম/এএজে