টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের করমজলসহ বিভিন্ন আকর্ষনীয় স্থান। তিন দিনের ছুটির কথা চিন্তা করে বিভিন্ন এলাকা থেকে সুন্দরবনে আসতে শুরু করে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা। বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার একটানা তিন দিনের ছুটি পেয়েছে দেশ বিদেশী পর্যটকরা। এখন বন জুড়ে রয়েছে পর্যটকদের ঢল। আর পর্যটকদের টানা এই আনাগোনা থাকবে পুরো শীত মৌসুম জুড়ে বলে জানিয়েছেন বনবিভাগ।
করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ফরেষ্টার হাওলাদার আজাদ কবির জানান, শীত মৌসুম হলো সুন্দরবনে পর্যটকদের ঘুরে দেখার সময়। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ সহস্রাধিক পর্যটক করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসে। এছাড়া বনের হাড়বাড়িয়া, হিরণপয়েন্ট, কটকা, কচিখালী ও দুবলাচর সহ বিভিন্ন স্পটেও প্রচুর দর্শনার্থী ভ্রমণ করছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক বনের কর্মচারীদের। তারপরও পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিরলস কাজ করছে তারা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুন্দরবন ভ্রমনে আসা পর্যটকরা সাধারণ মোংলা হয়েই বনে প্রবেশ করে থাকেন।
আর মোংলা থেকে সবচেয়ে কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান হলো সুন্দরবনের করমজল। এখানে রয়েছে কুমির বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্র। যাতে রয়েছে মায়াবি হরিন,বানর, ৭/৮ সাইজের লবন ও মিস্টি পানির কুমির। এগুলো দেখার পরেও উপভোগ করে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও বনের হরেক রকম সৌন্দর্য্য। যেসব পর্যটকরা অধিক ব্যয়ে বনের গহীনে যেতে পারেন না, তারা স্বল্প খরচেই করমজল ঘুরে দেখেন। আর যারা বেশি খরচ করে বনের অন্যান্য স্থানে যেতে চান, তারা লঞ্চ বা জালিবোট নিয়ে চলে যান হারবাড়িয়া,কটকা,কচিখালী ও দুবলার চরের আলোর কোলে। করমজলে পর্যটক ষ্পটে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে আরো একটি কচ্ছপের প্রজনন কেন্দ্র। এছাড়া রয়েছে কৃত্রিম পদ্ধতি তৈরি ছাড়া হরিণ ও বানরের আবাসস্থল, সুউচ্চ ওয়াচটাওয়ার, ফুট টেইলারসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থাপনা। এছাড়া বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা, পশু-পাখি, বন্যপ্রাণী দেখে দর্শনাথীরা তাদের তৃপ্তি মিটিয়ে থাকেন। তবে সুন্দরবনের এ সকল পর্যটন ষ্পটগুলোকে আরো বেশি আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলার জন্য সরকারীভাবে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এগুলো শেষ হলে দিনকে দিন পর্যটকের সংখ্যা আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
মোংলার পর্যটন ব্যবসায়ী ‘দি সাউদার্ন ট্যুরস’র মালিক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর মহামারীর জন্য এ খাতে প্রায় ৫ হাজার কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে। বর্তমানে পর্যটকদের আগমন খুব বেশি তাই তাদের পর্যটক ব্যবসাও ভাল চলছে। এতে আমরা যারা ব্যবসায়ী আছি তাদের আয়ও বেশি হচ্ছে, আমরা চাই সারা বছর ধরেই যেন এই অবস্থা বিরাজ থাকে।
তিনি আরো বলেন, যারা দুরপাল্লার জন্য সুন্দরবন ভ্রমনে আসেন তাদের জন্য বনবিভাগের কাছ থেকে পাস নিতে বাগেরহাটে যেতে হয়। এতে যেমন সময় নষ্ট হয় তেমনি দর্শনার্থীরা ভোগান্তির শিকার হন। তাই আমাদের পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবী, যদি মোংলা থেকে এই পাস দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরাও উপকৃত হবো এবং দর্শনার্থীরা ভোগান্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন বলে জানায় এ ট্যুর ব্যবসায়ী।
মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, সরকারী ছুটির কারনে সুন্দরবন পর্যটকদের আনাগোনা আগের তুলনায় বেড়েগেছে দ্বিগুন। সরকারী উচ্চ পর্যয়ের কর্মকর্তরা এই ছুটিতে সুন্দরবন দেখতে এখানে আসে, আর তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমাদের পুলিশ সদস্যদের সাথে দিতে হয়। স্বল্প সংখ্যক সদস্য থাকার পরেও পর্যটকদের টুরিষ্ট পুলিশ প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। তারপরেও আমরা আনন্দিত,যতই দিন যাচ্ছে সুন্দরবনের পর্যটকদের পদচারণা বাড়ছে। তবে বন বিভাগের উচ্চ মহলের নজরদারি একটু বাড়ালে বনের এ পর্যটক ক্ষতি থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।