খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
অনিশ্চয়তায় ট্যুর অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টরা

পর্যটকদের জন্য কবে খুলবে সুন্দরবনের দ্বার?

আশরাফুল ইসলাম নূর

বিশ্ব ঐতিহ্যের ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের যাতয়াত বন্ধ অন্তত সাড়ে পাঁচ মাস। এতে চরম আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ/জাহাজ মালিক ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিক এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কবে খুলবে- সুন্দরবনের দ্বার, তাও জানেন না কেউ। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এমনি অনিশ্চিয়তায় খুলনা অঞ্চলের পর্যটন শিল্প।

অন্যদিকে, করোনা সঙ্কটে দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস বন্ধ থাকার পর ১৭ আগস্ট থেকে সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন এলাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলো। আর গত ১৫ জুন থেকে ভারতের দক্ষিণ রায়ের ডেরা সুন্দরবনে যাতয়াত করছেন পর্যটকরা।

খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটন শিল্প বলতে বিশ্বখ্যাত নয়নাভিরাম ‘সুন্দরবন’কেই বোঝায়। সুন্দরবনকে কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পে লক্ষাধিক মানুষের রুটিরুজি জড়িত। সারাবছর দেশি-বিদেশী বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে সুন্দরবন উপকূল। তবে বর্ষার পরেই সাধারণত: সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম শুরু। সে হিসেবে, এখনি সময় শুরু প্রাকৃতিক নৈর্গিক সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য উপভোগের।

বনবিভাগের সূত্রমতে, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে গত ১৯ মার্চ পুরো সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন জুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার নির্দেশনা ছিল। সুন্দরবনের নয়টি পর্যটন এলাকায় পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চে) কোনো কোনো দিন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান করেন। এদিকে, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে থাকা দর্শনার্থীরা। চরম আর্থিক হুমকির মুখে পড়েন ট্যুর অপারেটর ও সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ট্যুর অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সভাপতি মোঃ মইনুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, কুয়াকাটাসহ দেশের প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনে খুলে দিলে কোন সমস্যা নয়; বরং সরকারের রাজস্ব আয় হবে। সুন্দরবন কেন্দ্রিক ৭০টি ট্যুর কোম্পানীর অর্ধশত জাহাজের কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় পাঁচ মাস বেকার; চরম আর্থিক সংকটে। মাত্র তিন থেকে চার মাস সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম; এরপর সারাবছর বসে বসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন গুনতে হয়। সেই সময়টাতেই যদি পর্যটন বন্ধ থাকে, তাহলে একদিনে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হবে; অন্যদিকে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পটি বিধ্বস্ত হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন উপকূলের নোনা অঞ্চলের মানুষ কিন্তু প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল; করোনা সংক্রমণ কিন্তু তাদের ধরেনি। সে হিসেবে বলা যায়, সুন্দরবন অঞ্চল নিরাপদ। করোনায় গৃহবন্দী মানুষের অবসাদ কাটাতে অবিলম্বে সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতয়াতের অনুমতির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৯ মার্চ সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণার নির্দেশ দেন মন্ত্রণালয়। তারপর এবিষয়ে আর কোন নির্দেশনা আসেনি। কবে নাগাদ আসবে, সেটাই মন্ত্রণালয়ের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থ বছরে সুন্দরবনের পর্যটনখাত থেকে কোন রাজস্ব আয় হয়নি। তবে গেল অর্থবছরে (২০২০-১৯) এক কোটি ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। গত বছর এক লাখ ৭ হাজার ৩৮৪জন পর্যটক সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন।

পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বশির আল মামুন বলেন, গত অর্থ বছরে সুন্দরবনের পর্যটনখাতে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটনের বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি।

লকডাউনে দীর্ঘদিন বাড়িতে আটকে থাকার পর প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে মন চায় সবারই। নিরিবিলি পরিবেশে সপরিবারে প্রাণভরে শ্বাস নিতে চাইলে সুন্দরবন ভ্রমণের বিকল্প নেই। সেই ভাবনায় গত ১৫ জুন থেকে পর্যটন শিল্পকে সরব করতে লকডাউন শেষে পর্যটকদের সুন্দরবনে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছে ভারত।

পর্যটকসহ বোট চালকদের জন্যে রয়েছে বিশেষ কিছু নির্দেশিকা। তা হচ্ছে –
১. পর্যটকদের স্যানিটাইজেশনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২. যে বোটে করে পর্যটকরা ঘুরবেন; সেগুলো স্যানিটাইজ করতে হবে।
৩. সুন্দরবনের হোটেলগুলোকে স্যানিটাইজেশনের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৪. বোটে পর্যটকদের শারিরিক দূরত্বের দিকেও নজর রাখতে হবে।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!