ঋতু পরিক্রমার হিসেবে শীতমৌসুম জলাশয়গুলোতে এখনই আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিরা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও হিমালয় ও সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসছে ডুমুরিয়ার খাল-বিলে। এসব পাখি শিকারের জন্য রাতে আমনধান ক্ষেতে নেমে পড়ে অসাধু শিকারীরা। অতিথি পাখির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রজাতির উপকারী পাখিও নিধন করে। ওই পাখিগুলো না খেয়ে মেরে ফেলে তারা। তবে এসব পাখি আর পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পাখি শিকারীরা।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়ার ধানক্ষেত থেকে অতিথি পাখি শিকারের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ছয়টি মরা পাখিও উদ্ধার করা হয়। সোমবার (৩০ নভেম্বর) মধ্যরাতে ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সোনামুখ পরিবার’ যৌথভাবে এ অভিযান চালিয়ে ওই সব জব্দ করে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওসি আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
সোনামুখ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাখি নিধনে প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যে মোবাইল ফোন, ব্যাটারি ও সাউন্ডবক্স পান। এছাড়া ১০ কিলোমিটারের মত নাইলনের সুতা ও জাল জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে জব্দ করা ওই সব সরঞ্জামদি জনসাধারণের মাঝে আগুণে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়।
সোনামুখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা এএম কামরুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে জানান, অতিথি পাখি নিধনের জন্য শিকারীরা প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধানখেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। এ ছাড়া শিকারীরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। রাতে পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায় তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে। আবার চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে ও কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকে কিছু শিকারী।
পরিবেশবিদরা জানান, রাতে শিকারীরা যে অভিনব কৌশলে পাখি শিকার করছে, তা পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গভীর রাতে যখন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে, তখন আমাদের দেশের পরিবেশের জন্য উপকারী বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও নিধন করে। সে সব পাখিগুলো মানুষ না খেয়ে ফেলে দেন। যা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বিপ্লব মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, সকল প্রকার পাখি নিধন দণ্ডণীয় অপরাধ। সেই অনুসারে অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে দুপুরে পাখি নিধনের সুফল-কুফল সম্পর্কে আলোচনা করেছি। জনগণকে সচেতন করতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট / এআর