পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে জলাশয় বা পুকুর ভরাট করার অভিযোগে সাতক্ষীরায় এই প্রথম করো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার (১৫ মে) সাতক্ষীরা সদর থানায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬ (ঙ) এবং ৪ এর (১) (২) ১৫ (১) ৮ ও ১ ধারা লঙ্ঘনের দায়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর গ্রামের মৃত মীর গোলাম মোস্তফার স্ত্রী নাজনীন বেগমকে ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার সুলতানপুর মৌজার জেএল নং ১০০, ২৪১ খতিয়ানের ৮৭ ও ৮৮ দাগের ৪৯ শতক জমিতে প্রাচীন একটি পুকুর ছিল। যা ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর হতে ২০২৩ সালের ১৪ মে পর্যন্ত সময়ে আসামি মাটি দিয়ে ভরাট কার্যক্রম অব্যহত রাখেন।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, মিসেস নাজনীন বেগমের পিতা মৃত শেখ মাহবুবর রহমান ও চাচা মৃত মুজিবর রহমান নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যাওয়ায় তিনি ওই পুকুর ও বাড়ির মালিক হন। পুকুরটির গভীরতা অন্তত ৩০ থেকে ৪০ ফুট। ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর পুকুরটি ভরাটের কার্যক্রম শুরু করলে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক ঘটনার সত্যতা পেয়ে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। পরে পর্যায়ক্রমে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর ও ২১ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ১২ মার্চ তিনটি নোটিশের মাধ্যমে পুকুরটি ভরাট না করাসহ পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। নোটিশ পেয়ে আসামি সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রাখলেও রাতের আধারে মাটি এনে পুকুর ভরাট কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন এবং সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুকুরটির ভরাট কার্যক্রম প্রায় শেষ করেছেন।
এদিকে এর আগে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ অন্যদের তোয়াক্কা করেননি পুকুরটির মালিক। এমনকি বিভিন্ন সময় তাদের সাথে খারাপ ব্যবহারও করেছেন। আসামি নাজনীন বেগম বহু প্রাচীন পুকুরটি ভরাট করে পরিবেশ আইনের উপরিউক্ত ধারাসমূহ লঙ্ঘনসহ জলাশয়ের জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস করেছেন। এজাহারে একই সাথে রাতের আধারে ট্রাক্টর যোগে মাটি ভরাট কার্যক্রমে ব্যবহৃত ট্রাক্টর আটকের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, সুলতানপুরে পুকুর ভরাটের বিষয়ে ৩টি নোটিশ দেওয়া হলেও তা অমান্য এবং সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর অভিযোগে পুকুর মালিক নাজনীন বেগমকে আসামি করে সদর থানায় পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া শহরের পাওয়ার হাউজের পেছনের একটি পুকুর ভরাট হয়েছে। সেটিও নিয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়াও কয়েকটি পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়েরকৃত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা নং-৩১।
খুলনা গেজেট/ এসজেড