খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ মাঘ, ১৪৩১ | ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  আজ থেকে গাজীপুরসহ সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

যৌনাঙ্গ কেটে সন্তান প্রসবের চেষ্টা, মৃত্যু শয্যায় প্রসূতি

চিতলমারী প্রতিনিধি

বাগেরহাটের চিতলমারীতে এক প্রসূতি মায়ের যৌনাঙ্গ কেটে রাতভর সন্তান প্রসবের চেষ্টা করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে গুরুতর অসুস্থ ওই প্রসূতি মাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ক্লিনিকে তার সিজার সম্পন্ন হয়েছে। তিনি কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন।

অসুস্থ প্রসূতি মায়ের নাম আখি আক্তার (২২)। সে গ্রামের ফেরদৌস সরদারের স্ত্রী এবং শাহানা বেগমের মেয়ে।

এ ঘটনায় প্রসূতির মা শাহানা বেগম বাদী হয়ে হিজলা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের এফডব্লিউএ মঞ্জুশ্রী শিকদার ও আয়া মোমেনার বিরুদ্ধে চিতলমারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, আখি আক্তারের বিয়ের পর একটি দুর্ঘটনায় তার স্বামী ফেরদাউস সরদারের মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে যায়। এরপর থেকে মেয়ের পরিবার তার দেখাশুনা করতে হয়। তার মেয়ের তাফসিয়া নামে সাড়ে চার বছর বয়সের একটি মেয়ে আছে। আখি আবারও সন্তান সম্ভবা হলে গত ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় হিজলা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের এফডব্লিউএ মঞ্জুশ্রী শিকদার ও আয়া মোমেনা শাহানার বাড়িতে বসে আখির প্রসবের ব্যবস্থা করেন।

তখন শাহানা বলেন, ‘কোন প্রকার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। সমস্যা মনে হলে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তারা তা না করে সারা রাত ধরে তার মেয়ের প্রসব ঘটাতে তার শরীরের উপর নানা ধরণের চাপ প্রয়োগ ও টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। তাদের টানা হেঁচড়ায় আমার মেয়ের গোপনাঙ্গ ছিড়ে যায় এবং তারা কেচি দিয়ে যৌনাঙ্গের দুই পাশ কেটে বাচ্চা বের করার চেষ্টা করে। রবিবার ভোরের দিকে মেয়ের আত্মচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। এ সময় প্রতিবেশীরা এফডব্লিউএ মঞ্জুশ্রী শিকদার ও আয়া মোমেনার ভুল চিকিৎসায় ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তারা তার মেয়েকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় চিতলমারী সদরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আখির যৌনাঙ্গে ২০টি সেলাই দেন এবং সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করান। বর্তমানে তার মেয়ে আখি মৃত্যু শয্যায় রয়েছে।’

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহানা বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে মঞ্জুশ্রী ও মোমেনা আমাদের কোন খোঁজ নেয়নি। মঞ্জুশ্রী ও মোমেনার বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ জমা দিতে গেলে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে অফিস সহকারি মো. আবু হানিফ অভিযোগ জমা না নিয়ে আমার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। পরে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তার কথায় তাচ্ছিল্যের সাথে অভিযোগপত্রটি জমা রাখেন। আমি এ সব ঘটনার বিচারসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

এ ব্যাপারে এফডব্লিউএ মঞ্জুশ্রী শিকদার ও আয়া মোমেনা বলেন, ‘প্রসব করানোর সার্টিফিকেট আমাদের আছে। যৌনাঙ্গ কাটাকাটি করে আমরা কোন ভুল করিনি।’

চিতলমারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে অফিস সহকারি মো. আবু হানিফ বলেন, ‘যেহেতু একটা ঘটনা ঘটেছে। সেহেতু আমি স্যারের নির্দেশ ছাড়া অভিযোগপত্র জমা নিতে পারি না।’

চিতলমারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ আল-ইমরান বলেন, ‘অভিযোগ পত্রটি হাতে না পেলেও ঘটনাটি আমি শুনেছি। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) আমি উভয়পক্ষকে ডেকে শুনে দেখব।’

নাম না প্রকাশ করার শর্তে ক্লিনিকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রসূতি মাকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের ক্লিনিকে আনা হয়েছে। আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছেন। প্রসূতি মায়ের কাটা যৌনাঙ্গে ২০টির মত সেলাই লেগেছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!