ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেছেন বিজয়ী নৌকার প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। উবায়দুল মোকতাদির সদ্য গঠিত মন্ত্রিসভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি নিজে বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম আদালত) নজরুল ইসলামের আদালতে এ মামলা করেন। এতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণাকালে ফিরোজুর রহমান আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ফিরোজুর রহমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। নির্বাচনে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ফিরোজুর রহমান কাঁচি প্রতীকে ৬৪ হাজার ৩৭ ভোট পেয়েছেন। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভোটে কারচুপি ও জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ এনে এবং পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবিতে নির্বাচন বর্জন করেছিলেন ফিরোজুর। অবশ্য উবায়দুল মোকতাদির মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় গতকাল রাতে ঢাকায় তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছাও জানান ফিরোজুর।
মানহানি মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বুঝতে পেরে ফিরোজুর রহমান বাদীর (উবায়দুল মোকতাদির) বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করেছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর রাত আটটার দিকে সদর উপজেলার সুহিলপুর বাজারে নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত হন ফিরোজুর রহমান। সেখানে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে বাদীকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার জন্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দেন। বক্তব্যে ফিরোজুর বলেন, ‘তাঁর (মোকতাদির) নিজের ঘরেই আমার টাকা আছে। ৩০-৩৫ বছর আগে আমি তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দিয়া রাখছি। ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) করার সময় আর্থিক সহায়তা করেছি।’
ফিরোজুরের এই বক্তব্য তারেকুল ইসলাম অনিক নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করা হয়। এ ছাড়া জনসভায় উপস্থিত থাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ওই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন।
আরজিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে ৩০-৩৫ বছর আগে ফিরোজুরের সঙ্গে মোকতাদিরের কোনো পরিচয় ছিল না। সে সময় বাদী মোকতাদির চৌধুরী তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ফিরোজুরের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। বক্তব্যের ভিডিও দৃষ্টিগোচর হলে গত ২৮ ডিসেম্বর মানহানিকর বক্তব্য পরিহার করে বাদীর কাছে ক্ষমা চাইতে একটি আইনি নোটিশ ফিরোজুরের কাছে ডাকযোগে পাঠানো হয়। কিন্তু আইনি নোটিশ গ্রহণ করেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ফিরোজুর। এই মানহানিকর বক্তব্যে মোকতাদিরের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে মানমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি ১০০ কোটি টাকার হবে।
মোকতাদির চৌধুরীর আইনজীবী ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক আবদুল জব্বার মামুন বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। এখন বিবাদীর উদ্দেশে সমন জারি করবেন আদালত। বিবাদীপক্ষ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করেন, তাহলে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের জন্য ফিরোজুরের যেকোনো স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে নিলামে বিক্রির মাধ্যমে টাকা আদায়ের আদেশ দিতে আদালতকে অনুরোধ করেছেন মামলার বাদী। আগামী রোববার আদালত এ মামলায় শুনানি করবেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ফিরোজুর রহমান বলেন, ‘আমি নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলাম, আমি ওনার (মোকতাদির চৌধুরী) ইউনিভার্সিটিতে চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। বেশি দিন হয়নি। আর অনেক আগে একটি স্কুল করার জন্য তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। টাকা দিয়েছি এটা সত্য। যা সত্য তাই তো বললাম। ওনি যখন উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন, নির্বাচানী ব্যস্ততার কারণে এর উত্তর দিতে পারিনি। যেহেতু মামলা করেছেন, আইনিভাবে জবাব দিব৷’
খুলনা গেজেট/কেডি