শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা, হতাহত, গ্রেপ্তার, কারফিউ, জাতিসংঘের লোগোযুক্ত গাড়ি ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি, ইন্টারনেট বন্ধ রাখা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে দেশে দেশে ব্যাখ্যা দিচ্ছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাইকমিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ ও থিঙ্কট্যাঙ্কের কাছে বিএনপি-জামায়াতের ‘বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার’ ব্যাখ্যা তুলে ধরছে।
সরকারের দাবি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে রুখতে কারফিউ জারির পর ‘দেখামাত্র গুলি’ বা ‘শুট অ্যাট সাইট’-এর একটি ঘটনাও ঘটেনি।
রোববার রাতে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি বাংলাদেশি গণমাধ্যমেও পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং গণমাধ্যমসহ কিছু আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি সরকার লক্ষ্য করেছে। বিশেষ করে অপপ্রচার, ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তির ব্যাপক প্রচারের প্রেক্ষাপটে ‘অকুণ্ঠ সমর্থন ও পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার’ জন্য সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কৃতজ্ঞ।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সরকার সব আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে চায় যে, সময়োপযোগী এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত ও সহিংসতার প্রেক্ষাপটে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নজিরবিহীন যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, তা মোকাবিলায় সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাবে। এরই অংশ হিসেবে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রয়াসে সরকার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকতে আগ্রহী।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্দোলন ঘিরে যে হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা হবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে কারফিউ জারির পর ‘দেখামাত্র গুলি’ বা ‘শুট অ্যাট সাইট’ এর একটি ঘটনাও ঘটেনি। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশন চলাকালে হেলিকপ্টার থেকে কোনো গুলি করা হয়নি। হেলিকপ্টারকে নজরদারি ও আটকে পড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধারে ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও দাবি করা হয়, জাতিসংঘের লোগোযুক্ত গাড়ি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়নি। বরং গাড়িগুলোর লোগো রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। যখন ওই গাড়ি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, দ্রুত তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ ছাড়া কারফিউর সময় গণমাধ্যমকে জরুরি সেবাভুক্তও করা হয়েছে। সরকার যে কোনো মূল্যে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারকে সমুন্নত রেখেছে এবং তা অব্যাহত রাখবে।
সরকারের দাবি, বিএনপি-জামায়াত অর্থনীতিকে স্থবির করে দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের জন্য ছাত্র আন্দোলন দখলে নিয়েছিল। স্বার্থান্বেষী ওই মহল একইভাবে এখন স্থানীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইনানুগ ব্যবস্থা এবং প্রতিক্রিয়াগুলোকে ‘ছাত্র বিক্ষোভের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন’ হিসেবে উপস্থাপন করতে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এইচ