বাগেরহাটের শরণখোলায় চাঞ্চল্যকর মা ও শিশু মেয়েকে কুপিয়ে নিঃশংসভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ওই নারীর স্বামী জাফর হাওলাদার পরকিয়া সন্দেহের জের ধরে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে নিজেই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এমন তথ্য উদঘাটন করেছে পিবিআই।
এদিন বিকেলে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে বাগেরহাট জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: আছাদুল ইসলামের আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন আবু জাফর হাওলাদার।
পিবিআই,বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান বলেন,তদন্তের সূত্র ধরে পাপিয়ার স্বামী মোঃ আবু জাফর হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যাকান্ডের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। আবু জাফরের স্বীকারোক্তি মতে,আবু জাফর হাওলদার লোক দিয়ে তার স্ত্রীকে মেরেছে। তবে তার মেয়েকে মারার কথা ছিলো না। সে জানায় তার বউ এর সাথে পারিবারিক টানপেড়ন চলছিল। তার বউ সব সময় মোবাইলে কার সাথে কথা বলে বিষয়টি জানতে চাইলে তার বউ ভিকটিম পাপিয়া তাকে জুতা দিয়ে প্রহার ও বাড়ি থেকে বের করে দেয়। স্ত্রী পাপিয়া এর আগেও স্বামীকে ঝাড়ু দিয়ে প্রহার করেছিল। এসব বিষয় নিয়ে বউ এর প্রতি সংক্ষুব্ধ ছিল আবু জাফর হাওলাদার।
ভাড়াটিয়া খুনি মনির তাকে জিজ্ঞেস করে “কী জাফর ভাই, তোমাকে নাকি তোমার বউ জুতা দিয়ে মেরেছে,তখন মনির প্রস্তাব দেয় তাকে ১ লাখ টাকা দিলে সব সমস্যার সমাধান করে দেবে। তখন আবু জাফল বলে “চিন্তা করে দেখি”। পরে আবু জাফর তার ভাই আবু তালেবের মাধ্যমে মনিরকে ৩০ হাজার টাকা দেয়। মনির টাকা পেয়ে আবু জাফরকে তার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে, কাজ হলে বাড়ির লোকজন তাকে জানাবে বলে জানায়। কথা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট আবু জাফরের স্ত্রী পাপিয়া ও মেয়ে সওদা জেনিকে কুপিয়ে হত্যা করে মনির হাওলাদার।
ঘটনার পরের দিন মনির হাওলাদারসহ তার তিন ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু মনির জামিনে বের হলে,আবু জাফর মনিরকে জিজ্ঞেস করে তার বউকে মারার কথা ছিলো, সে কেন তার মেয়েকে মেরে ফেলল। মনির জবাবে তাকে জানায় তার মেয়ে তাকে চিনে ফেলেছিল তাই তাকে মেরে ফেলেছে। তার লাশ কেন টুকু মাষ্টারের বাড়ি নিলো সে প্রশ্নের জবাবে মনির আবু জাফর কে বলে টুকু মাষ্টারের সাথে তার অন্য বোঝাপড়া আছে।
উল্লেখ, ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে পাপিয়া আক্তার (৩৮) ও তার মেয়ে ছাওদা জেনি (০৫)কে কুপিয়ে হত্যা করে মনির হাওলাদার ও তার লোকজন। হত্যার পরের দিনই মনিরসহ তার তিন ভাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনমাস কারাভোগের পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়। পরবর্তীতে পিবিআই বাগেরহাট মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী পাপিয়ার স্বামী মোঃ আবু জাফর হাওলাদার (৩৯), ভাসুর আবু তালেব হাওলাদার (৫৫) ও তার স্ত্রী আসমা বেগম (৪৫) এবং পাপিয়ার আরেক ভাশুর মোঃ আবু বক্কার হাওলাদার আদালতে আত্মসম্পর্ন করেন। পরে পিবিআই এর তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদেরকে হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আসামীদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি