পাহাড়ের সাথে সরিষা দানার সম্পর্ক যেমন, সমুদ্রের সাথে এক ফোটা পানির তুলনা যেমন, আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার সম্পর্ক তেমনই। দুনিয়া ধ্বংসশীল, আখেরাত চিরস্থায়ী। ধন-দৌলত, সুখ-স্বচ্ছন্দ, হায়াত মউত, উপভোগ-সম্ভোগ সব দিক দিয়ে আখেরাতের জীবনই শ্রেষ্ট। আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া কিছুই না।
সহীহ মুসলীমের ২৮৫৮ নং হাদিসে রসুল স. বলেন, পরকালের তুলনায় ইহকাল এতটুকু যে তোমাদের কেউ সমুদ্রে পানিতে শাহাদাত আঙ্গুল ভিজিয়ে দেখলো কতটুকু পরিমাণ পানি এতে লেগেছে। এই এক ফোটা হলো দুনিয়া, আর পুরো সমুদ্র হলো আখেরাত।
পার্থিব জীবনের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, “দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই না, আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন, যদি বন্দারা জানতো !” সুরা আনকাবুত ৬৪।
আখেরাতের জীবন সমুদ্রের মত, দুনিয়ার জীবন আঙ্গুলের মাথায় এক ফোটা পানির মত। আখেরাতের মান-সম্মান সমুদ্র , দুনিয়ার সম্মান এক ফোটা। আখেরাতের ধন-দৌলত সমুদ্র সমান, দুনিয়ার সম্পদ এক কতরা সমান। পরকালের যৌবন স্থায়ী এবং অটুট, আর দুনিয়ার যৌবন অস্থায়ী, ভঙ্গুর। জান্নাতের সৌন্দর্য্য অটুট, অবিনশ্বর, দুুুুুনিয়ার সৌন্দর্য্য ক্ষণস্থায়ী, কিছু দিন পর বিলীন হয়ে যায়। আখেরাতের নেয়ামত সমুদ্র সম, দুনিয়র নিয়ামত এক ফোটার মত। আখেরাতের হায়াত অন্তহীন সমুদ্র, আর দুনিয়র হায়াত পড়ে যাওয়ার উপক্রম এক
ফোটা পানি। আখেরাতের সবকিছু স্থায়ী, অবিনশ্বর, অনাদী, অনন্ত। দুনিয়ার সবকিছু নশ্বর, ক্ষয়িঞ্চু, অস্থায়ী, অনিত্য আর মরিচিকা। আখেরাত ছেড়ে দুনিয়া উপার্জনে মত্ত হওয়া মানে বিশাল সমুদ্র ভান্ডার ছেড়ে এক ফোটার পিছে দৌড়ানো।
এই ছলনাময়ী দুনিয়ার স্রষ্টা বলে দিয়েছেন, “দুনিয়ার জীবন ধোকার সামগ্রী ছাড়া কিছু নয়” সুরা হাদীদ ২০।
অথচ আমরা দুনিয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার কে স্থায়ী আর লাভের বস্তু মনে করে থাকি। আখেরাতকে পিছে ফেলে রাখি। ছলনাময়ী দুনিয়ার মায়ায় জড়িয়ে পড়ি। এটাকেই আসল জীবন মনে করে ভুল করে বসি।
দুনিয়ার মোহে ডুবে যাওয়া আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
أَرَضِیتُمْ بِالْحَیَاةِ الدُّنْیَا مِنَ الآْخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَیَاةِ الدُّنْیَا فِي الآْخِرَةِ إِلاَّ قَلِیلٌ
অর্থঃ তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে ? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। সুরা তওবা ৩৮।
নিশ্চয়ই যেটা নশ্বর এবং ধোকা তার থেকে সেটাই উত্তম যা অবিনশ্বর, অনাদি, অনন্ত, কখনো শেষ হয়না। সুতরাং সবদিক দিয়ে পরকাল স্থায়ী এবং শ্রেষ্ঠ। আর স্থায়ী সৌন্দর্য্য বাদ দিয়ে অস্থায়ী সৌন্দর্য্য গ্রহণ করা নিশ্চয় বোকামি।
আল্লাহ তায়ালা ফরমাইয়াছেন,
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَیَاةَ الدُّنْیَا – وَالآْخِرَةُ خَیْرٌ وَأَبْقَ-
অর্থ ঃ বরং তোমরা দুনিয়র জীবনকে প্রধান্য দিচ্ছো, অথচ আখেরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী। সুরা আ’লা ১৬-১৭।
লেখকঃ সিনিয়র শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা।
খুলনা গেজেট/ বিএমএস