পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদী শাসনের ব্যয় আরও এক দফায় ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা বাড়ানো অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নতুন করে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদী শাসন কাজের এক্সটেনশন অব টাইমের ক্লেইম জনিত কারণে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
নতুন করে ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে৷ মূল চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা। এরপর প্রথম দফায় ৮৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৩ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। এতে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ পদ্মা সেতুর নদী শাসনের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এখন দ্বিতীয় দফায় পদ্মা সেতুর নদীশাসনের ব্যয় ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা বাড়ানো হলো। এতে মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ালো ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ টাকা। যা মূল চুক্তি থেকে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদী শাসন কাজ করছে চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড।
সচিব বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামীকাল ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। নদী শাসনের কাজ করছে চিনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। তাদের কাজ সমাপ্তির তারিখ ছিল গত বছরের ৩০ জুন। ডিফেক্ট লাইবিলিটি পিরিয়ড আছে এক বছর। তার মানে এদের কাছে শেষ হবে আগামীকাল।
তিনি বলেন, এই সময়ে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত কিছু কাজ করতে হয়েছে। দুটি কারণে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে। একটা হলো প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে নদী শাসন কাজের সীমানায় অবস্থিত কাঠালাবাড়ি ফেরি ঘাট, লঞ্চ ঘাট এবং আশেপাশের প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার জন্য বিআইডব্লিউ থেকে জায়গা পেতে বিলম্ব হওয়া। এতে তিন বছরের বেশি সময় বিলম্ব হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ হলো- কাজ করতে যাওয়ার সময় ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার পর মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর ওজনে নদী শাসন কাজের সীমানা বরাবর ২০১২ সালে নদীর প্রচণ্ড স্রোতে নদী ভাঙন হয়, ঠিকাদারের কাজের কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ডিজাইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ডিজাইন তৈরিতে বিলম্ব হয়। এ কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব দাখিল করেছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাউনসেল এইসিওএম’ থেকে মূল সেতু, নদীশাসন ও অ্যাপ্রোচ সড়ক কাজের বিস্তারিত ডিজাইন করা হয়েছে। এফআইডিআইসি কন্ট্রাক্ট ডকিউমেন্ট অনুযায়ী পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদীশাসন কাজের উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত দরপত্র গ্রহণ করা হয় ২০১৪ সালের ১৯ জুন। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদীশাসন কাজের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। এই প্রস্তাবটি অনুমোদনের পর সিনোহাইড্রো কর্পোরেশনের সঙ্গে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ৪৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে চুক্তিপত্র সই হয়। এই কাজ তদারকির জন্য কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট হিসেবে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নিয়োজিত আছে।
খুলনা গেজেট/এএজে