খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরে মালবাহী জাহাজ থেকে ৬ মরদেহ উদ্ধার ; মুমূর্ষু ২
  ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পদ্মা সেতু : মোংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট

পদ্মা সেতু নির্মাণের সাথে সাথে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে চলছে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড। করোনাকালীনও তরিৎ গতিতে চলছে এসব প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীর সাথে মোংলা বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সাথে সাথে মোংলা বন্দরের এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে, চট্টগ্রাম বন্দরের মত মোংলা বন্দরও ব্যবসায়ীদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।

বন্দর সূত্র জানায়, পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মোংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলো এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। এ বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সম্প্রতি মোংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহি হবেন। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য উন্নয়নের সকল কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে এবং এ বন্দরের কার্যক্রম আরো বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বন্দর কতৃপক্ষ।



মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর হলেও কখনও কখনও এখানে ৫০/৬০টি জাহাজ নোঙর করতে দেখা যায়। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল উপযোগী এ বন্দরের প্রবেশ মুখ ও পশুর নদীর গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। বর্তমান সরকারের আমলে নানা দিক দিয়েই বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং বন্দর পুনরায় সচল হয়েছে। সম্প্রতি পদ্মা সেতু নির্মাণের সাথে এ বন্দরে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কন্টেইনার ইয়ার্ড, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বন্দর ব্যবহারকারীদের জরুরী বার্তা সেবা (ভ্যাসেল ট্রাফিক মেনেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম), অত্যাধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ, ড্রেজিং ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প। এছাড়া এ বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ। নদীর গভীরে রয়েছে অসংখ্য ভাসমান নোঙর। সাগর থেকে বন্দরে প্রবেশমুখ হিরণ পয়েন্ট নামক স্থানে রয়েছে বিদেশী নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ । ইতিমধ্যে বেসরকারী কিছু প্রতিষ্ঠানও মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। মোংলা বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করি পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে।

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ে আমূল পরিবর্তন আসবে। যা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। অল্প সময়ে কম খরচে ঢাকায় পণ্য পরিবহন করার মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা ব্যবসায়ে লাভবান হবে বলে তিনি মনে করেন।




শিপিং ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল হোসেন বলেন, এখন মোংলা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে রাজধানীতে পৌছাতে বেশ সময় লাগে, যা কখনও কখনও দুই-তিন দিন লেগে যায়। ফলে নষ্ট হয় অনেক পচনশীল দ্রব্য। এতে অনেক সময় ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে আমরা দ্রুত পণ্য পরিবহন করতে পারবো। সেজন্য ব্যবসায়ীদের কাছে পদ্মা সেতু যথেষ্ঠ গুরুত্ব বহন করে।

অর্থনীতিবিদ ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের সড়ক যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। বিশেষ করে মোংলা বন্দর ব্যবহার বাড়বে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমে আসবে।

 

খুলনা গেজেট /এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!