আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ড্রোন হামলায় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। জাওয়াহিরি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
গত রোববার ড্রোনের মাধ্যমে আফগান রাজধানী কাবুলে ওই হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাকে হত্যার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকান নাগরিকদের বিরুদ্ধে হত্যা ও সহিংসতার কাজে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িত ছিলেন আয়মান আল-জাওয়াহিরি। এখন ন্যায়বিচার করা হয়েছে এবং এই সন্ত্রাসী নেতা আর নেই।’
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ গত রোববার যখন ড্রোনের মাধ্যমে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তখন জাওয়াহিরি একটি সেফ হাউসের বারান্দায় অবস্থান করছিলেন।
তার আরও বলেছেন, হামলার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা সেখানে (সেফ হাউসে) উপস্থিত ছিলেন। তবে ওই হামলায় তারা অক্ষত রয়েছেন এবং শুধুমাত্র জাওয়াহিরিকেই হত্যা করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনার পর ৭১ বছর বয়সী আল-কায়েদা নেতার ওপর ‘নির্ভুল হামলা’ চালানোর চূড়ান্ত অনুমোদন দেন তিনি।
আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন এবং আল-জাওয়াহিরি এক সাথে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এবং ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার আয়োজন করেন বলে অনেকে অভিহিত করেন।
আল-জাওয়াহিরি মিশরের ইসলামি জিহাদ নামক জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালের মে মাসে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হবার পর আল-জাওয়াহিরি আল-কায়েদার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
তার আগে আল-জাওয়াহিরিকে ওসামা বিন লাদেনের ডান হাত আর আল-কায়েদার মূল চিন্তাবিদ বলে গণ্য করা হতো। অনেকে মনে করেন আয়মান আল-জাওয়াহিরিই ছিলেন ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার মূল রূপকার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের’ একজন ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, তার (জাওয়াহিরি) হত্যাকাণ্ড ২০০১ সালের হামলায় নিহতদের পরিবারকে দুঃখের অবসান ঘটাবে। তিনি আরও বলেন, ‘যতই সময় লাগুক না কেন, আপনি যেখানেই লুকিয়ে থাকুন না কেন, আপনি যদি আমাদের জনগণের জন্য হুমকি হয়ে থাকেন তবে যুক্তরাষ্ট্র আপনাকে খুঁজে বের করবে এবং আপনাকে বের করে দেবে।’
বাইডেনের ভাষায়, ‘আমরা আমাদের জাতি, দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করা থেকে কখনোই পিছপা হবো না।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০০১ সালের সন্ত্রাসী হামলা ছাড়াও জাওয়াহিরি অন্যান্য সহিংসতার পরিকল্পনাও করেছিলেন। এর মধ্যে ২০০০ সালের অক্টোবরে এডেনে ইউএসএস কোল নেভাল ডেস্ট্রয়ারের আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও রয়েছে। ওই হামলায় ১৭ মার্কিন নাবিক নিহত হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে পাকিস্তানে মার্কিন অভিযানে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হন। লাদেন নিহত হওয়ার পর ২০১১ সালের ১৬ জুন আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে আল-কায়েদার নতুন নেতা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ১১ বছরেরও বেশি সময পর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হলেন তিনি।